শুক্রবার । ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ । ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩২

৬ বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণ করেছে ভারতীয় জলদস্যুরা

শ্যামনগর প্রতিনিধি

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন মামুন্দো ও বৈকেরি নদীর বিভিন্ন খাল থেকে রাশিদুল ইসলাম (৩৫) ও আতাউর রহমান (৩২) সহ ছয় বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। অপহৃত জেলেদের ফিরে আসা সহযোগীদের দাবি, ভারতীয় জলদস্যু বাহিনীর সদস্যরা তাদের অপহরণ করেছে।

তারা জানান, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সীমান্তবর্তী মামুন্দো নদীর মারডাঙ্গা খাল এবং মামুন্দো ও বৈকেরি নদীর সংযোগস্থল সংলগ্ন হরিণটানা খাল থেকে ছয় জেলেকে অপহরণ করা হয়।

রাশিদুল ও আতাউরসহ অপহরণের শিকার জেলেরা সকলে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কালিঞ্চি এবং টেংরাখালী গ্রামের বাসিন্দা। রাশিদুল ও আতাউর যথাক্রমে মান্নান বরকন্দাজ ও সামছুর রহমানের ছেলে।

অপহৃত অপর চার জেলের নাম জানা না গেলেও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে নৌকা মালিক কালিঞ্চি গ্রামের মমতাজ ভাঙির ছেলে মোশারফ হোসেন।

এদিকে, লোকালয়ের কাছাকাছি এলাকা থেকে বাংলাদেশি জেলেদের অপহরণের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশের সাথে শতাধিক গ্রামবাসী সীমান্তবর্তী নদীতে অবস্থানরত দস্যুদের উদ্দেশ্যে রওনা হলেও বিজিবি সদস্যরা মাঝপথে তাদের আটকে দেয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

অপহৃত জেলেদের ফিরে আসা সহযোগীরা জানায়, মুক্তিপণের দাবিতে তাদের সঙ্গীদের উঠিয়ে নেয়া জলদস্যুরা ভারতীয়। নয় সদস্যের জলদস্যু দলটি চারটি আগ্নেয়াস্ত্র ও একটি ভারতীয় নৌযান নিয়ে তাদের উপর হামলা করে। সকালের দিকে দু’জনকে মাছের নৌকা থেকে তুলে নেয়ার পর দুপুরে চারটি পৃথক নৌকা থেকে আরও চারজনকে মুক্তিপণের জন্য জিম্মি করে নিয়ে যায় তারা।

টেংরাখালী গ্রামের নুরুল হক জানান, দু’দিন আগে বনবিভাগের পাশ (অনুমতিপত্র) নিয়ে তারা তিনজন সুন্দরবনে মাছ ধরতে যান। বুধবার বেলা ১১টার দিকে ভারতীয় বড় একটি বোট নিয়ে এসে জলদস্যুরা তাদের অপহরণের চেষ্টা চালায়।

এসময় তারা তিনজন নৌকা ছেড়ে বনের মধ্যে উঠে গেলে দস্যুরা শুধু নৌকা নিয়ে চলে যায়। এর আগে বুধবার সকালে রাশিদুল ও আতাউরকে অপহরণের কথা জানান টেংরাখালী গ্রামের ওয়েজকুরুনি

তিনি বলেন, অন্যান্য জেলেদের সাথে পাশাপাশি জাল ফেলে তারা মারঢাঙ্গা খালে মাছ ধরছিল। এসময় নয় সদস্যের জলদস্যু দলটি সেখানে পৌঁছে দুই নৌকা থেকে তাদেরকে উঠিয়ে নিলেও অপর তিনটি নৌকায় অবস্থানরত জেলেরা বনের মধ্যে উঠে যায়।

একইভাবে দুপুরের দিকে বৈকেরির হরিণটানা খাল থেকে এক জেলেসহ আরও তিনজনকে একই জলদস্যুরা অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে জানান কালিঞ্চি গ্রামের মমতাজ ভাঙির ছেলে মোশারফ হোসেন। তার দাবি, নৌকা থেকে জেলে উঠিয়ে নেয়ার পর তিনি লোকালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

তিনি আরো বলেন, জলদস্যু দলটি নিজেদের কাজল-মুন্না বাহিনী বলে পরিচয় দিচ্ছে। ইতোমধ্যে জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া জেলেদের মাধ্যমে তারা নিশ্চিত হয়েছে এসব জলদস্যু ভারতীয়। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া তিন বনদস্যু মুক্তিপণের টাকা ভারতে পাঠানোর কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

এদিকে স্থানীয় রমজাননগর ইউপি’র প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ লাল্টু জানান, মুক্তিপণের জন্য ছয় জেলেকে অপহরণের খবর পেয়ে তারা শতাধিক গ্রামবাসী ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিজিবি’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না মেলায় তাদেরকে পথিমধ্যে আটকে দেয়া হয়।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির মোল্লা জানান, দুই সপ্তাহ আগে যশোরের বিভিন্ন এলাকা থেকে একই জলদস্যু বাহিনীর তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বুধবার একইভাবে আরও কয়েকজন জেলে অপহরণের খবর পেয়ে অপহৃত জেলের পরিবারসহ গ্রামবাসীদের ডাকে সাড়া দিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েও ফিরে এসেছে।

 

খুলনা গেজেট/এমআর




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন