সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন মালঞ্চ ও চুনকুড়ি নদীর সংযোগ স্থলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধে হঠাৎ করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত রোববার গভীর রাতে উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর স্লাইড গেট সংলগ্ন মথুরাপুর গ্রামের ঋষি পাড়া এলাকায় এই ভাঙন দেখা দেয়। দিন যত যাচ্ছে ভাঙন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সেখানে বসবাসকারী চারটি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তারা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।
এদিকে খবর পেয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে সেখানে দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দেন।
ভাঙন কবলিত এলাকার আবু বক্কার গাজি, নেসার আলী গাজি, হামিদা খাতুন ও বিল্লাল হোসেন বলেন, আমরা ৩০/৪০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। নদীতে জাল ধরে মাছ, কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। গত রোববার গভীর রাতে হটাৎ করে আমাদের ঘরের মাঝখান দিয়ে ফাটল ধরে নদীতে নেমে যাচ্ছে। কিন্তু ৪/৫ দিনে এক ফুটের বেশি জায়গা জুড়ে ফাঁকা হয়ে মাটি সরে গেছে। খুব ভয়ে আছি কখন কি হয়। তাই ঘর-দোর খুলে ফেলে এখন রাস্তার ওপর খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।
আমাদের অন্য কোথাও জায়গা-জমি নেই যে সেখানে গিয়ে বসবাস করবো।
স্থানীয়রা বলেন, “দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁশের খাঁচা তৈরি করে এখানে ফেললে পলি জমে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে। তা না হলে ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। সামনে বড় গোন (জোয়ার) আসছে। সে সময় নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে। সাথে বৃষ্টিও হতে পারে। আর বৃষ্টি হলে যেখান থেকে ফাটল শুরু হয়েছে সব একবারে নদীতে নেমে যাবে। এখানে স্লুইচ গেটের পানি বের হওয়ার কারণে ঘোল পড়ে, যার ফলে নদীর চরের মাটি সরে গেছে। এই অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে নদীর প্রবল স্রোতে ক্ষতি হতে পারে বসতবাড়ি, মসজিদ, মন্দির, স্কুল, মিঠা পানির পুকুর, রাস্তাঘাটসহ এলাকার বিভিন্ন অবকাঠামো।
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমি মেম্বর পাঠিয়ে খবর নিচ্ছি এখন কি অবস্থা। তারপর দ্রুত সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলব।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার (এসও) প্রিন্সি রেজা বলেন, “ভাঙনস্থল পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করা হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন বলেন, “খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বে থাকা এসও কে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ৪টি পরিবারকে আপততো বসবাসের জন্য একটি ঘর দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে একটি জায়গা দেখে তাদের স্থানান্তর করা হবে। তিনি এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানান।
খুলনা গেজেট/এনএম