নড়াইল জেলায় নির্বিচারে শামুক নিধনের ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। জেলার প্রায় প্রতিটি মাছের খামারে সাদা ও গলদা চিংড়ির খাদ্য হিসেবে শামুক ব্যবহারের কারণে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত পরিবেশবান্ধব এই জলজ প্রাণীর সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।
জানা গেছে, জেলার কয়েক হাজার নারী-পুরুষ শামুক সংগ্রহ করে বিভিন্ন মাছের খামারে বিক্রি করছে। এতে জলজ পরিবেশ ও মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে এবং অতিথি পাখির আগমনও কমে যাচ্ছে।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, নড়াইলে ২১ হাজার ১৯৬ হেক্টর প্লাবন ভূমি রয়েছে। এসব জলাভূমিতে জ্যৈষ্ঠ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত পানি থাকে, যেখানে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় নিরীহ জলজ প্রাণী শামুক।
মনোরঞ্জন কাপুড়িয়া কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, “শামুককে প্রকৃতির ধাঙড় বলা হয়, কারণ তারা ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের ডিম খেয়ে ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। শামুক জলাশয়ের পানি বিশুদ্ধ রাখে ও পাখি-প্রাণীর খাদ্য হিসেবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।”
জেলায় ২২৬২ হেক্টরে চিংড়ি ও ১৭৮৭ হেক্টর জমিতে সাদা মাছের চাষ হয়। এসব খামারে শামুকের চাহিদা প্রচুর।
শামুক আহরণে জড়িত তুলারামপুর ইউনিয়নের বেনাহাটি গ্রামের সবিতা সরকার ও মিতা সরকার জানান, “জ্যৈষ্ঠ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত প্রতিদিন ভোরে শামুক সংগ্রহে যাই। প্রতিদিন ১০ থেকে ২৫ কেজি শামুক পাই, যা ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি করি। এতে দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়।”
মুলিয়া ইউনিয়নের মাছচাষি নিতাই বিশ্বাস জানান, “এক একর ঘেরে প্রতিদিন ৩০-৩৫ কেজি শামুক খাওয়াই। ফিডের দাম বেশি হওয়ায় শামুকই ব্যবহার করি। এতে চিংড়ির গ্রেড দ্রুত বাড়ে।”
এদিকে, লোহাগড়া উপজেলার ৮০ বছর বয়সী কৃষক ইমান শেখ খুলনা গেজেটকে বলেন, “আগে মরিচপাশা, গন্ডব, চালিঘাট এলাকায় অসংখ্য অতিথি পাখি দেখা যেত। তখন বিলে প্রচুর শামুকও ছিল। এখন শামুকের অভাবে পাখিও আর আসে না।”
জেলা মৎস্য চাষি অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আকরাম শাহীদ চুন্নু খুলনা গেজেটকে বলেন, “চিংড়ির দ্রুত বৃদ্ধির জন্য শামুক ব্যবহৃত হচ্ছে, তবে শামুকের সংখ্যা কমে গেছে। তাই প্রয়োজন পরিকল্পিত শামুক উৎপাদন।”
নড়াইল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমান খুলনা গেজেটকে বলেন, “শামুক একদিকে পানি পরিশোধন করে জলজ পরিবেশ ঠিক রাখে, অন্যদিকে মাটির উর্বরতা বাড়ায়। আমরা মাছের খাদ্য হিসেবে শামুকের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করছি। পাশাপাশি শামুক সংরক্ষণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “গত বছর কালিয়ার পাঁচটি গ্রামের বিল থেকে সংগ্রহ করা শামুক সংরক্ষণ করে বর্ষা মৌসুমে বিলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।” আগামী দিনে কৃষক ও খামারিদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এনএম
								
    
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
