বৃহস্পতিবার । ২রা অক্টোবর, ২০২৫ । ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২

নড়াইলে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্চিত , ভিডিও করায় হামলার শিকার সাংবাদিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, নড়াইল ও লোহাগড়া প্রতিনিধি

নড়াইল মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠানে নড়াইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত শাখার সহকারী নাজীর এটিএম বাবর আলীসহ তার অনুসারী কয়েকজন কর্মচারীর হাতে নড়াইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার এ্যাডভোকেট এস এ মতিন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা পরিষদের সদস্য সাইফুর রহমান হিলু লাঞ্ছিত হয়েছেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত এস এ টিভি প্রতিনিধি ও দেশরুপান্তর পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি আব্দুস সাত্তার ভিডিও ধারনকালে ওই অফিসের কর্মচারীরা মোবাইল ক্যামেরা জোরপূর্বক কেড়ে নিয়ে যায়।

শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।

নড়াইল জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সামনে এসব ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় বীরমুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বীরমুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু বলেন, শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে নড়াইল মুক্ত দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচির শেষ দিকে জেলা শিল্পকলা চত্বরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার অ্যাডভোকেট এসএ মতিন নাস্তার প্যাকেট আনতে যান। তখন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডিসি অফিসের সহকারী নাজির বাবর আলীর সাথে কথা কাটাকাটি হয়। তর্ক-বিতর্ককালে বাবরসহ তার অনুসারী ডিসি অফিসের কয়েকজন কর্মচারী এস এ মতিনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। তখন আমি এগিয়ে যাই। এরপর বাবর আলীসহ তার অনুসারীরা পুনরায় আমাদের ওপর চড়াও হয় এবং কয়েকবার তেড়ে আসে। এসময় উত্তেজিতভাবে আমাদের নিয়ে অশালীন আচরণ করতে থাকে। ঘটনাস্থলে নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ ফকরুল হাসান, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৃষ্ণা রায় সহ বেশ কয়েকজন ম্যাজিষ্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন।

বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এসএ মতিন বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা জীবন বাজি রেখে নড়াইলকে মুক্ত করেছিলাম। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠানে ডিসি অফিসের কর্মচারীদের হাতে লাঞ্ছিত হলাম। এর থেকে দুঃখজনক আর কিছু থাকতে পারে না।

এদিকে এ ঘটনার সময় উপস্থিত এসএ টিভির নড়াইল প্রতিনিধি আবদুস সাত্তার ভিডিও ধারণকালে ডিসি অফিসের কর্মচারীরা জোরপূর্বক তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও মুছে ফেলে।

সাংবাদিক আবদুস সাত্তার বলেন, নড়াইল মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠান শেষে আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখতে পাই নাজির বাবর আলীসহ বেশ কয়েকজন কর্মচারী বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এসএ মতিন ও সাইফুর রহমান হিলুর ওপর তেড়ে যাচ্ছেন। ঘটনাস্থলে দাড়িয়ে থাকা নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ ফকরুল হাসান ঠেকানোর চেষ্টা করেও নাজির আলী তোয়াক্কা না করে একাধিকবার হাত এগিয়ে নিয়ে যান এবং কেউ কেউ চেয়ার উচু করে মারতে যান। তখন পেশাগত কারনে আমি ভিডিও ধারণ করতে যাই। এসময় নড়াইলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৃষ্ণা রায় ভিডিও করতে বাধা দেয়। কিন্তু পেশাগত কারনে আমি ভিডিও ধারণ করতে থাকি। এক পর্যায়ে ডিসি অফিসের কয়েকজন কর্মচারী আমাকে জাপটে ধরে জোরপূর্বক হাত থেকে মোবাইলটি ছিনিয়ে নেয়।

নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল কবীর টুকু বলেন, আমি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা আজকের দিনে বীরমুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্চিত করা বিষয়টি আমাদের জন্য লজ্জার। এঘটনার ভিডিও ধারন করায় আমার প্রেসক্লাবের একজন সাংবাদিকেও লাঞ্চিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবে জরুরী সভায় বসে সিদ্ধান্ত নেবো।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত শাখার সহকারী নাজির এটিএম বাবর আলীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন কেটে দেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ ফকরুল হাসানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বীরমুক্তিযোদের আমরা সব সময় অনার করি। বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা এবং সাংবাদিকদের সাথে আমরা বসবো।’

 

খুলনা গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন