বৃহস্পতিবার । ২রা অক্টোবর, ২০২৫ । ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২

গণ-অভ্যুত্থানে বীরত্বগাঁথা মাগুরার শহিদ রাব্বি

মাগুরা প্রতিনিধি

মাগুরায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার স্বৈরাচার সরকার পতনের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে স্থানীয়  জনতার সাথে মিছিলের সামনে এগিয়ে গেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বি (৩৫)। গত বছরের ৪ আগস্ট মাগুরা শহরের ঢাকা রোড ব্রিজ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন তিনি। মেহেদী হাসান রাব্বি ছিলেন একজন মানবিক মানুষ।

জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা ছাড়াও এলাকার বিভিন্ন মানবিক ও সমাজিক কাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন তিনি। ‘মানবিক মাগুরা’ নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন রাব্বি। তার বাড়ি জেলা শহরের পৌর এলাকার বরুনাতৈল গ্রামে। তার বাবার নাম ময়েন উদ্দিন বিশ্বাস, মায়ের নাম সালেহা বেগম। বাবা মায়ের ৬ সন্তানের মধ্যে রাব্বি ছিলেন চতুর্থ। মাগুরা সরকারি হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন তিনি।

রাব্বির ছোট ভাই ইদ্রিস হোসেন জানান, গত বছর ৪ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সাথে মিছিল কারার জন্য শহরের পারনান্দুয়ালী ব্যাপারিপাড়া জামে মসজিদের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্র-জনতা। সমন্বয়কারীদের সাথে পুলিশের কথা হয়েছিল, শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে শহরের চৌরঙ্গী মোড় হয়ে আবার জামে মসজিদের সামনে ফিরে আসবে। সে মোতাবেক শান্তিপুর্নভাবে মিছিল করছিল স্থানীয় ছাত্র-জনতা। কিš মিছিল নিয়ে ঢাকা রোড ব্রিজে উঠে সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে পড়ে। মিছিলে থাকা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য স্থানীয় জনতার সাথে রাব্বিও এগিয়ে আসে। রাব্বি মিছিলের সামনে ছিল। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে হেলমেট পরিহিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মীরা মিছিলে গুলি চালায়। এ সময় রাব্বির বুকের বাম পাশের নিচে পাজড়ে গুলি লেগে আহত হয়। আন্দোলনকারীরা তাকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসারত অবস্থায় দুপুর ১টার দিকে রাব্বির মৃত্যু হয়। এ সময় আন্দোলনে থাকা রাব্বির ভাতিজা খালিদ বিশ্বাসসহ আন্দোলনে অংশ নেয়া অন্তত ৫০জন আহত হয়।
রাব্বির ছোট ভাই ইদ্রিস হোসেন ও রাব্বির স্ত্রী রুমি খাতুন দাবি করেন পুলিশ নয়, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতা-কর্মীদের গুলিতেই রাব্বি মারা গেছে। রাব্বি যখন নিহত হয় তখন তার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা ছিলেন। রাব্বির স্ত্রীর ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে। যার পৃথিবীতে আগমনের পূর্বেই তার পিতা দেশের জন্য শহিদ হয়েছে।

রাব্বির ছোট ভাই ইদ্রিস হোসেন আরো জানায়, তার ভাইয়ের ‘মাগুরা অনলাইন’ নামে ওয়াইফাই ইন্টারনেটের একটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই ব্যাবসা থেকে উপার্জিত টাকা সংসারের ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন দরিদ্র পরিবারকে সহায়তা করত তার ভাই।

রাব্বির আত্মীয় কিবরিয়া বিশ্বাস, মাহমুদ রেজা, ছাত্রনেতা, আল মামুন, শফিকুল ইসলাম সহ এলাকার অনেকে জানান, মেহেদী হাসান রাব্বি মানবিক মাগুরা নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়া তিনি স্থানীয় তিতুমীর স্মৃতিসংঘ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন। রাব্বি শহিদ হওয়ার পর তিতুমীর স্মৃতি সংঘের নাম পরিবর্তন করে ‘শহিদ রাব্বি স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ নামকরণ করা হয়েছে। রাজনীতি করলেও এলাকার বিভিন্ন মানবিক ও সামাজিক কাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন মেহেদী হাসান রাব্বি। মানবিক মাগুরা সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অসহায় ও দুস্থদের সহযোগিতা করতো। এছাড়া করোনা কালিন সময়ে রাব্বি মাস্ক, স্যানিটাইজার, খাবার বিতরণসহ করোনা রোগী ও স্বজনদের সহযোগিতা করেছে। ঈদের সময়ও অসহায়-দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে রাব্বি। এছাড়া এ সংগঠনের পক্ষ থেকে ২০২২ সালে সিলেটে বন্যাদুর্গতদের ত্রাণ সহায়তা নিয়ে সিলেট গিয়েছিলেন রাব্বি। সত্যিকার অর্থে দেশ একজন মানবিক রাব্বিকে হারিয়েছে এ ক্ষতি অপূরণীয়।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন