একের পর পর হত্যাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে খুলনাবাসী যে মুহুর্তে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কে রয়েছে, সেই মুহুর্তে পুলিশী অভিযানে অবৈধ অস্ত্রের কারখানার সন্ধানসহ অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জাম উদ্ধার নিয়ে নতুন এক নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে পরিচালিত অভিযানে আটক করা হয় ৪ জনকে। পুলিশের বক্তব্যে মিডিয়ায় এই খবর ফলাও করে প্রচার হওয়ার পর সেই পুলিশ বলছে, এগুলো বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি)—এর প্রশিক্ষণের ডামি অস্ত্রের সরঞ্জাম।
খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি তৈমুর ইসলাম বলেন, ‘অস্ত্রের সরঞ্জাম উদ্ধারসহ দুই কারখানা থেকে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। পরবর্তীতে জানা যায় এগুলো বিএনসিসি’র প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল। তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, তাই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।’
অস্ত্র তৈরির কারখানা এবং এই অস্ত্র বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো পুলিশের দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা ধারণা করেছিলাম। কিন্তু পরে দেখি এটি বিএনসিসির। বিএনসিসি তাদের অস্ত্রের অংশগুলো তৈরি করতে দিয়েছিল। এসব সরঞ্জাম তৈরির জন্য তাদের অনুমতি রয়েছে এমন কাগজপত্র নিয়ে এসেছে।’
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় অভিযানকালে গণমাধ্যমে তিনি বলেছিলেন, এই কারখানায় অস্ত্রের বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশগুলো তৈরি হয়। ট্রিগার, ট্রিগার গার্ডসহ ঢালাই করে যেসব জিনিস বানাতে হয় সেগুলো এখানে তৈরি হচ্ছে। বাটের কাঠের অংশ, স্প্রিং অন্যস্থানে সংযোজন হয়। এখানে ৩০/৩৫টি অস্ত্রের সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, অনেক আগে থেকে এখানে অস্ত্র তৈরি হয় বলে জানতে পেরেছি। এর আগেও এখান থেকে বেশ কয়েকবার খুলনা ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে।
অভিযান চলাকালে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, ডিবি পুলিশের কাছে তথ্য ছিল এখানে একটি অস্ত্রের কারখানা রয়েছে, অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া যাবে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির একটি টিম অভিযান পরিচালনা করেছে, সত্যতাও পাওয়া গেছে। অস্ত্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্র যেই সাচের মধ্যে তৈরি করা হয়, সেগুলোও আমরা উদ্ধার করেছি। এই কারখানায় অন্যান্য কাজের পাশাপাশি অস্ত্র তৈরি করছিল। এখান থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর যেখানে ফিনিশিং দেওয়া হয়, ডিবির টিম সেখানেও কাজ করছে।
ডিবির এই টিম খুব ভালো কাজ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, বর্তমানে খুলনায় সন্ত্রাসীদের অনেক তৎপরতা অনেক উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। আমাদের এতো কাছে অস্ত্রের কারখানা রয়েছে, এটি উদ্বেগজনক। মেট্রোপলিটন এলাকার ভেতরে এ ধরনের কারখানা থাকবে আর আমরা কেউ জানবো না, এটা হতে পারে না। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন।

