১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৩ ডিসেম্বর হইতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিরোমণিতে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী খুলনা জেলার ফুলতলা থানাধীন শিরোমণি, গিলাতলা, বাদামতলা, ম্যামগঞ্জ ও মশিয়ালী এলাকাকে শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত করে এবং মিনি ক্যান্টনমেন্ট হিসাবে ভারী অস্ত্রসহ অবস্থান নেয়। শিরোমণি টি এন্ড টি ভবন ইউনিয়ন কোল্ড স্টোর এবং বাদামতলার নশুখানের ইটভাটায় টাউয়ার ও বাংকার নির্মাণ করত অবস্থান গ্রহণ করে। যাহার প্রেক্ষিতে অত্র এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে।
১২ ডিসেম্বর, ১৯৭১ মিত্র বাহিনী রাজপুত ডিভিশন কলারোয়া হয়ে যখন খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হয় তখন তাদের পথ প্রদর্শক হিসাবে মুক্তি বাহিনীর শম রেজওয়ান আলী, শেখ আনসার আলী, শেখ আব্দুল গণি, শেখ আব্দুল কুদ্দুস এবং অন্যান্যরা সঙ্গে থাকেন। একই দিনে ফুলতলার ১৪ মাইল নামক স্থানে অন্যান্য ডিভিশনের সঙ্গে একত্রিত হয়ে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ কাজী তাবারক হোসেন (তাবু কাজী) এর নেতৃত্বে কাজী ফরহাদ হোসেন, খোকন কাজী, কাজী জমির উদ্দিন, কাজী আশরাফ হোসেন, এম এ রাজ্জাক ও এম এ মান্নানসহ মুক্তি বাহিনীর ১৬ টি গাড়ি খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হলে শিরোমণি পৌঁছানো মাত্রই পূর্বে থেকে ওৎপেতে থাকা হানাদার বাহিনী ভারী অস্ত্রসহ চতুর্মূখী আক্রমণ শুরু করে। যাহার প্রেক্ষিতে মিত্র বাহিনীর ১৫ টি গাড়ি, অস্ত্র-গোলাবারুদ ধ্বংস হয়ে যায়। একমাত্র মহেন্দ্র সিং-এর গাড়িটি ক্যাম্পে ফিরে যায়। পরক্ষণেই হানাদার বাহিনীদের আক্রমণের লক্ষ্যে মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনী শিরোমণির চতুষ্পার্শ্বে অবস্থান গ্রহণ করে এবং লক্ষ্য বস্তুর উপর কামান ও মর্টারের সাহায্যে প্রচণ্ড আঘাত হানে। এর ফলে পাকবাহিনীর নির্মিত মিনি ক্যান্টনমেন্ট ধ্বংস হয়ে যায় এবং মানসিকভাবে তারা দুর্বল হয়ে পড়ে।
১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকা শত্রুমুক্ত হলেও শিরোমণিতে তাদের তৎপরতা অব্যাহত থাকে।
মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর সদস্যগণ বিলডাকাতিয়া, ভৈরব নদীর পূর্বপাড়, দক্ষিণে খুলনা শহর হতে এবং ফুলতলা একাকা হতে চতুর্মূখী আক্রমণের পরও তারা আত্মসমর্পণ করেনি। তখন অন্যান্য স্থান হতে মুক্তি বাহিনী এবং মিত্র বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করে যখন যুদ্ধ প্রস্তুতি চলছিল সেই মুহূর্তে পাক হানাদার বাহিনী তাদের মৃত্যু নিশ্চিত জানতে পারে এবং দেশের অন্যান্য এলাকার আত্মসমর্পণের খবর পেয়ে ১৭ ডিসেম্বর তারা অস্ত্র ফেলে দিয়ে মিত্র বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে এবং আক্রোশে কিছুক্ষণ হাতাহাতি লড়াই হয়। পরবর্তীতে তাদের একত্রিত করে খুলনা সার্কিট হাউজে বন্দি অবস্থায় প্রেরণ করা হয়।
খুলনা গেজেট/এনএম

