শুক্রবার । ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ । ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

ভেঙে পড়ছে ভূমিহীনদের স্বপ্ন

নিজস্ব প্রতি‌বেদক

ভূমি ও আশ্রয়হীনদের জমিসহ ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। খারাপ ইট, ভেজাল বালু ও সিমেন্ট ব্যবহারে ভেঙে পড়েছে সরকারি অর্থে নির্মিত এসব ঘর। এর সঙ্গে ভেঙেছে ভূমি ও আশ্রয়হীনদের স্বপ্ন। অপরদিকে অনেকে সরকারি ঘর বরাদ্দ নিলেও তাদের ঘর অন্যের কাছে বিক্রি এবং ভাড়া দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ চিত্র খুলনার বটিয়াঘাটার।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্যমতে, এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে বিভিন্ন ধাপে ৭৪৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়। এসব ঘর নির্মাণে বরাদ্দ ছিল প্রায় ১৯ কোটি ৪ লাখ ৩৮ হাজার ২০০ টাকা।

কাগজে কলমে ঘর নির্মাণের যে খরচ দেখানো হয়েছে, বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের ঘর নির্মাণে যেসব মালামাল ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত নি¤œমানের। যে কারণে নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যে অধিকাংশ ঘর ভেঙে পড়ে। বিশেষ করে সুরখালী ইউনিয়নের রায়পুর আশ্রায়ণ প্রকল্পে ১৫০টি ঘর নির্মাণ করা হলেও অধিকাংশ ভেঙে পড়েছে। এছাড়া অনেক ঘর ঝুঁকিপূর্ণ অব¯ায় রয়েছে। তারপরও সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন আশ্রয়হীনরা।

আশ্রয়হীন প্রকল্পের রেবেকা, রথীন, মহসিন ও কুদ্দুস বলেন, “ঝড় বৃষ্টি হলে আমরা ঘরে থাকার সাহস পাই না। যে-কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।”

ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি মহসিন সানা বলেন, “সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে প্রকল্পের বাসিন্দাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এখানকার অধিকাংশ ঘর ভেঙে পড়েছে, ঝুঁকিতে রয়েছে বাকিগুলি। জরুরি ভিত্তিতে এসব ঘর মেরামত করা দরকার।”

উপজেলার জলমা, বালিয়াডাঙ্গা ও সুরখালী ইউনিয়নের একাধিক আশ্রায়ণ প্রকল্পে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ঘর বিক্রি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। জলমা ইউনিয়নের তেঁতুলতলা দশ গেট এলাকায় ১৬০টি ঘরের মধ্যে ৩০-৪০টি ঘর বিক্রি করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়। ওই প্রকল্পের ১০০ নং ঘরের মালিক জেসমিন আক্তার তার ঘর স্থানীয় মোঃ শামীমের নিকট, ৯৯ নং ঘরের মালিক একই এলাকার মাহাতাব হোসেনের কাছে বিক্রি করে।

এছাড়া আরও নয়জন ঘর কিনেও না পাওয়ায় তাদের পক্ষে নতুন বাজার এলাকার মিরাজ শিকদার বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। মামলায় বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী সুজন, বহিরাগত জুলেখা ও সাইফুলকে আসামি করা হয়। পরে জুলেখা ও সাইফুলকে আটক করা হলেও সুজনকে অন্যত্র বদলি করে এসিল্যান্ড অফিস দায় এড়িয়েছে।

একই অভিযোগ রয়েছে, মাথাভাঙ্গা প্রকল্পে। এখানে ২০০টি ঘরের মধ্যে ২০-২৫টি ঘর বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নে বিরাট এলাকায়ও আশ্রায়ণ প্রকল্পের মোজাফফর মল্লিকের ঘর মফিজের স্ত্রীর নিকট, বিলকিস বেগমের ঘর আসলামের নিকট, নুর ইসলামের ঘর আমানাত মাঝির নিকট, মুরছানিলের ঘর রিসালের নিকট ও হায়দার আলীর ঘর হ্যাপি বেগমের নিকট বিক্রি করা হয়।

প্রকল্পের ঘর ক্রেতা মাহাতাব হোসেন বলেন, “টাকার দিয়ে ঘরটি কিনেছি। এখনো আমার নামে কোনো কাগজপত্র হয়নি।”

স্থানীয় সাংবাদিক সোহরাব হোসেন মুন্সী বলেন, “অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের টাকা হরিলুট হয়েছে তা স্পষ্ট।”

রায়পুর আশ্রায়ণ প্রকল্পের আলতাফ হোসেন বলেন, “এসব ঘর অনেকের স্বপ্ন ছিল, কিন্ত এখন সেটা দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

৬নং বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ আবু বকর মোল্লা বলেন, “অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘর কেনাবেচার বিষয়ে আমার নিকট কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলেই তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

বটিয়াঘাটা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শোয়েব শাত-ঈল-ইভান বলেন, “ঘর নির্মাণসংক্রান্ত বিষয়টি তার যোগদানের অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে। তবুও ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার কামরুজ্জামান জানান, আমি সদ্য দায়িত্ব গ্রহণ করায় ঘটনাটির পুরো বিবরণ আমার জানা নেই।”

তিনি আরও বলেন, “তদন্তের মাধ্যমে সবকিছু যাচাই করা হবে। অনিয়ম প্রমাণ মিললে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন