সাত মাস আগে কালিপদ সরকারের গলায় ক্যানসার ধরা পড়ে। সে পেশায় একজন দিনমজুর। ডুমুরিয়া উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। বিভিন্ন হাসপাতালে দফায় দফায় ভর্তি ও কেমোথেরাপিসহ অন্যান্য চিকিৎসা ব্যয় লাগাম ছাড়িয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে পরিবারটি। ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে তাদের। তবুুও সুস্থ হয়ে ওঠেনি কালিপদ। বর্তমানে চিকিৎসা দেওয়ার মতো অর্থ তাদের আর নেই। তাই সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়ে গত মে মাসে সমাজসেবা অধিদপ্তরে আবেদন করে পরিবারটি।
মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অসংখ্য ব্যক্তি একদিকে আর্থিকভাবে নিঃস্ব হচ্ছে, অন্যদিকে চিকিৎসার শেষ পর্যায়ে এসে একটা সময় মৃত্যুর কাছে হার মানতে হচ্ছে! ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছে চিংড়া গ্রামের রওশন আলী শেখ, আঙ্গারদহ’র জ্যোৎস্না রানী, জিলেরডাঙ্গার শিক্ষক উমা বৈরাগী, গুটুদিয়ার বিউটি বেগম, খরসঙ্গ গ্রামের রোজিনা বেগমসহ অসংখ্য ব্যক্তি।
জানা গেছে, “বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে মরণব্যাধি ক্যানসারসহ বড় বড় ৫টি জটিল ব্যাধি। বছরে প্রায় ১ কোটি মানুষ মারা যাচ্ছে এ রোগে। এরমধ্যে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৯১ হাজার ৩৩৯ জন প্রাণ হারাচ্ছে। আক্রান্ত রোগীর মধ্যে বেশির ভাগ ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৪৯টি আবেদন পড়ে সমাজসেবা কার্যালয়। এরমধ্যে ক্যানসার ৯৭, কিডনি ১০, লিভার সিরোসিস ৪, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ২০, জন্মগত হৃদ্রোগ ১৩ ও থ্যালাসেমিয়া ৫। এসব রোগীর মধ্যে ১২৬ জনকে ৫০ হাজার টাকা করে ৬৩ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দিয়েছে সরকার। গত ৬ মাসের মধ্যে ক্যানসারে আক্রান্ত ৮৫, কিডনি ৭, লিভার সিরোসিস ৩, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ১৬, জন্মগত হৃদ্রোগ ১১ ও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ৪ জনকে অনুদান দেওয়া হয়। এরমধ্যে প্রায় ১৫% রোগীর প্রাণ হারানোর খবর পাওয়া গেছে।
ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে গত দুই বছরে অকালে মারা গেছেন গুটুদিয়া গ্রামের রাজিব মন্ডল, ওয়াদুদ গাজী, রুমিছা বেগম, মির্জাপুর গ্রামের প্রকাশ মন্ডল, সুভাষ সরকার, সুমিত্রা বিশ্বাস, সাজিয়াড়া গ্রামের আদিত্য বিশ্বাস ও তার ছেলে সুকুমার বিশ্বাস, চিংড়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম শেখ, মালেক শেখসহ অর্ধশত জন।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মনোজ রায় জানান, “ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ জন আর্থিক সহায়তা চেয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরে আবেদন করছে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে মোট ১৪৯ জন আবেদন কারীর মধ্যে ১২৬ জনকে ৫০ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান প্রদান করা হয়েছে।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কাজল মল্লিক জানান, “সারাবিশ্বে ক্যানসার রোগ তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে ভেজাল খাদ্য। বিশেষ করে ফাস্ট ফুড, আর্টিফিশিয়ালি খাবার যেমন, বাহারি শরবত, রকমারি খাবারে ‘ফুড গ্রেড’-এর নামে কারখানায় রাসায়নিক উপদান ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষাক্ত ওইসব ক্যামিক্যাল মিশ্রিত খাবার খেয়ে অকালে মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এছাড়া খাদ্য শস্য উৎপাদনেও প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহৃত হওয়ার ফলে ক্যানসারসহ বড় বড় জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।”
খুলনা গেজেট/এনএম

