শুক্রবার । ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ । ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
অভ্যুত্থানের পর ১৬ মাসে খুলনায় ৪৮টি হত্যাকান্ড

আলোচিত হত্যা মামলার তদন্তে গতি নেই, খুনীরা ধরা পড়েনি

নিজস্ব প্রতি‌বেদক

মা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন নগরীর মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ার তরুণ তানভীর হাসান শুভ। গত ১ অক্টোবর রাতে ঘরের জানালা দিয়ে গুলি করে তাকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় রাতেই অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন তার বাবা। হত্যাকান্ডের দুই মাস পার হয়েছে, জড়িত একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

শুধু এটিই নয়; খুলনার অধিকাংশ আলোচিত হত্যাকান্ডের অভিযুক্তরা ধরা পড়ছে না। ফলে খুনও বন্ধ হচ্ছে না। প্রতি মাসেই নগরীর কোথাও না কোথাও খুন, গুলি অথবা কুপিয়ে জখমের ঘটনা ঘটছে। গত নভেম্বর মাসে ৮টি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত ৩০ নভেম্বর আদালতের সামনে ফজলে রাব্বি রাজন ও হাসিব হাওলাদার নামের দুই যুবককে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ৫ দিন অতিবাহিত হলেও খুনীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় রিপন নামের একজনকে আটক করলেও তিনি নিরীহ বলে দাবি করেছে তার পরিবার ও এলাকাবাসী। হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে না থাকার ভিডিও প্রকাশ করেছে তারা।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অপরাধ শাখা থেকে জানা গেছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে গত ১৬ মাসে খুলনায় ৪৮টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৬টি অর্থ্যাৎ ৩৪ শতাংশ হত্যার নেপথ্যে ছিল মাদক ও আধিপত্য। নগরীর কোনো না কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এসব হত্যায় জড়িত। এর বাইরে প্রেমসংক্রান্ত বিরোধ, চুরি ও তুচ্ছ কারণে প্রতিশোধপরায়ন হয়ে হত্যাকান্ড ঘটেছে আরও ১৮টি। এসব হত্যাকান্ডের অধিকাংশ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবুও হত্যাকান্ড বন্ধ হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত ৫ মাসের ব্যবধানে শুধু মহেশ্বরপাশা এলাকাতেই ৪ জনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে গত ১১ জুলাই মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়া নিজ বাড়ির সামনে বহিষ্কৃত যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান মোল্লাকে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ওই মাসে হত্যা মামলায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর সন্দেহভাজন আরও ৩ তিনকে আটক করা হয়। কিন্তু এরা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত এমন প্রমাণ তুলে ধরতে পারেনি পুলিশ। আসামিরাও আদালতে জবানবন্দি দেননি।

৩ আগস্ট ঘের ব্যবসায়ী আলামিন হাওলাদার, ১ অক্টোবর তানভীর হাসান শুভ এবং গত ২ নভেম্বর বিএনপি নেতা মামুন শেখকে লক্ষ্য করে ছোড়া গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে এমদাদুল হকের শরীরে বিদ্ধ হলে তিনি নিহত হন। এর মধ্যে আলামিন হত্যা মামলায় ১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুভ ও এমদাদুল হক হত্যার ঘটনায় একজনও ধরা পড়েনি। মামলা দুটির তদন্তেও কোনো অগ্রগতি নেই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আড়ংঘাটা থানার এস আই মিনহাজুল ইসলাম বলেন, “এখনও ক্লু পাওয়া যায়নি। কেউ গ্রেপ্তারও হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি।”

নিহত মাহবুবের বাবা ও মামলার বাদি আবদুল করিম মোল্লা বলেন, “খুনীদের সবাই চেনে, অথচ ৫ মাস হয়ে গেল মাহাবুবের খুনীরা ধরা পড়লো না। এর মধ্যে বাড়ির পাশে শুভ খুন হলো। মাহাবুবের খুনীরা ধরা পড়লে শুভ ও এমদাদুল হক হয়তো বেঁচে যেত।”

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, “অভ্যুত্থানের পর পুলিশের ঘুরে দাড়াতে সময় লেগেছে। এই সুযোগে বেপরোয়া হয়ে ওঠা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো এলাকা দখল নিয়ে বিরোধে জড়ায়। তারা টার্গেট কিলিং ঘটাচ্ছে। এ ধরণের হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা কিছুটা দূরহ।”

তিনি বলেন, “খুনের পরই সন্ত্রাসীরা অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছে। এজন্য গ্রেপ্তারে সময় লাগছে। তবে ইতোমধ্যে ৯ শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ ৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যরা দ্রুতই গ্রেপ্তার হবে।”

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন