বুধবার । ২৬শে নভেম্বর, ২০২৫ । ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

ছয় সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে জিম্মি নগরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনার ৬ সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে নগরবাসী। এসব বাহিনীর আধিপত্য বিস্তার ও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত নগরীতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে অর্ধশত ব্যক্তি। পুলিশের কার্যক্রম স্বাভাবিক না হওয়া এবং র‌্যাবের ঝিমিয়ে পড়া অভিযানের কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ওই সব সন্ত্রাসী বাহিনী। প্রতি রাতে খুনোখুনির সংবাদে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, খুলনায় বর্তমানে ৬টি সন্ত্রাসী গ্রুপ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিরাতে খুনোখুনিতে লিপ্ত রয়েছে। এই গ্রুপগুলো হলো গ্রেনেড বাবুর বি-কোম্পানি, চরমপন্থি হুমা বাহিনী, আশিক বাহিনী, পলাশ বাহিনী, নুর আজিম বাহিনী ও দৌলতপুর এলাকার আরমান বাহিনী। আরমান এবং নুর আজিম কারাগারে থাকলেও নিজ নিজ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে সেখান থেকে।

একাধিক সূত্র জানায়, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাসে খুন হয়েছে অন্তত অর্ধশত মানুষ। মাসে শত কোটি টাকার মাদক বাণিজ্যে ও এলাকার প্রভাব বিস্তারের লড়াই খুলনায় রক্তাক্ত সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। এসব সন্ত্রাসীদের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। ফলে গোটা খুলনাঞ্চলজুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ শুক্রবার রাতে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে নগরীর লবণচরা থানার মধ্য হরিণটানা এলাকার আজাদ মেম্বরের বাড়ির সামনে রাজু নামের একজনকে নুর আজিম ও গ্রেনেড বাবুর সদস্যরা হত্যার উদ্দেশ্যে পরপর ৬টি গুলি করে। ৪ টি গুলি রাজুর পিঠে, একটি গলায় এবং একটি গুলি বুকের বাম পাশে বিদ্ধ হয়। রাতে গুলিবিদ্ধ ওই যুবককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়। গত রবিবার রাতে খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানার করিমনগর এলাকায় বাসায় ঢুকে স্ত্রী’র সামনে গুলি করে ও জবাই করে হত্যা করা হয় আলাউদ্দিন মৃধা নামের এক মাদক বিক্রেতাকে।

সূত্রটি আরও জানায়, ৬টি সন্ত্রাসী গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে খুলনায় মাসে অন্তত ৭০ থেকে ১০০ কোটি টাকার মাদক কেনা-বেচা হয়। মাদকের এই বিশাল বাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী রনি চৌধুরী ওরফে গ্রেনেড বাবু (বি-কোম্পানি), শেখ পলাশ, নুর আজিম, এবং আশিক বাহিনী প্রায় বিরোধে জড়ায়। এর মধ্যে মাদকের অর্ধেকের বেশি একাই নিয়ন্ত্রণ করে গ্রেনেড বাবু।

সূত্রটি জানায়, পাঁচ শতাধিক সদস্যের বাহিনী নিয়ে খুলনা ও আশে পাশের এলাকায় মাদকের সিন্ডিকেট পরিচালনা করে গ্রেনেড বাবু। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১২ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রস্তুত করে পুরস্কার ঘোষণা করলে বেশিরভাগ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হলেও গ্রেনেড বাবু ও আশিক এখনও রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এছাড়া দৌলতপুর, খানজাহান আলী ও আড়ংঘাটা থানা এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ করছে হুমা বাহিনী ও আরমান বাহিনী। আধিপত্য নিয়ে এই দুই গ্রুপের মধ্যে খুনো খুনি প্রায়ই ঘটে।

সূত্রটি আরও জানায়, খুলনার ওই ৬টি সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধানরা ৫ আগস্টের আগে খুলনার আলোচিত শেখ বাড়ির শেল্টারে ছিল। তবে ওই সময় ওদের মধ্যে সমঝোতা থাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম তুলনামূলক কম ছিল।

কেএমপি’র সহকারী পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড সিপি) ত ম রোকনুজ্জামান বলেন, “মাদকের আধিপত্য বিস্তার নিয়েই প্রতিরাতে খুনখারাবির ঘটনা ঘটছে। বিগত সরকার পতনের পরপর পুলিশের নিষ্ক্রীয়তায় ৬টি সন্ত্রাসী বাহিনীর তৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। চোরাচালানের মাধ্যমে আসা মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এরা খুনখারাবি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।

র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক লে: কর্নেল নিস্টার আহমেদ খুলনা গেজেটকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। নিয়মিত আসামি ধরে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দিয়ে চালান দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের পরিমাণ খুলনায় বেড়েছে তা তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন। সম্প্রতি খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানার করিমনগর এলাকায় মাদকের অর্থ ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে যুবককে গুলি এবং জবাই করে হত্যা করা হয়। মামলার আসামি মিন্টু শেখকে রূপসা উপজেলার হোসেনপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলার অন্যতম প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য আইচগাতিতে অভিযান চালানো হলে সেখান থেকে সে পালিয়ে যায়। এ সকল হত্যাকাণ্ডের আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান আছে।

তিনি আরও বলেন, খুন খারাবি একটি সামাজিক ব্যাধি এবং অপরাধ। এ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা প্রশাসনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সমাজের সকল স্তরের নাগরিককে এ ব্যাধি দূর করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন