সোমবার । ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ । ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাইমারি এডুকেশন ট্রেনিং সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর

প্রশাসকের দায়িত্ব পালনে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ, বদলি ঠেকাতে ভুল তথ্য সরবরাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

উপজেলা প্রাইমারি এডুকেশন ট্রেনিং সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর মোঃ মনির হোসেন তিন মেয়াদে প্রায় এক যুগ ডুমুরিয়ায়। সদ্য স্ট্যান্ডরিলিজ হলেও এখনও দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন দপ্তরে। অসুস্থ এবং মেয়েকে ভূয়া এসএসসি পরীক্ষার্থী সাজিয়ে দ্বায়িত্ব বুঝে না দিয়ে বদলি ঠেকাতে রাজধানীতে টানা ২০ দিন অবস্থান করছেন। সদ্য বিদায়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের চাপে খর্নিয়া ইউপি’র প্রশাসক থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তবে সেখানেও তার বিরুদ্ধে উঠেছে নানা অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ।

গত ২৮ অক্টোবর মনির হোসেনকে ভোলার চরফ্যাশনে বদলি করা হয়। বদলির পর থেকে ডুমুরিয়ায় থাকার জন্য নানা অজুহাত তৈরি করেন। ২০২২ সালে তার মেয়ে ডুমুরিয়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করলেও আগামীতে পরীক্ষার্থী এমন একটি প্রত্যয়নপত্র তৈরি করে অধিদপ্তরে জমা দিয়েছেন। পরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন যে ওই মেয়ে ২০২২ সালে পাস করেছে।

এর আগে প্রথম মেয়াদে মোঃ মনির হোসেন ডুমুরিয়ায় যোগদান করেন ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি। ওই সময় তৎকালীন এমপি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তোষামোদি করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত থেকে বেশ খোশমেজাজে চাকরি করেন ৪ বছর। ২০১৭ সালের ৫ মার্চ বদলি হয়ে একই বছর ১০ অক্টোবর আবারও যোগদান করেন ডুমুরিয়ায়। একই ভাবে ৩ বছর পার করে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর বদলি হন। তৃতীয় বার আবার ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ডুমুরিয়ায় যোগদান করেন। প্রত্যেকবার তৎকালীন এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সহযোগিতায় এবং তার অনুসারী শিক্ষকদের পৃষ্ঠপোষকতায় বহাল তবিয়তে চাকরি করেছেন। কিন্তু গত বছর ৫ আগস্টের পর রাতারাতি ভোল পাল্টে ফেলেন। উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে খর্নিয়া ইউপির প্রশাসক নিযুক্ত হয়ে শুরু করেন অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি। ৩/৪ জন শিক্ষক নিয়ে প্রায়ই পরিষদ চালান। ইচ্ছেমতো প্রকল্প তৈরি করে তার পছন্দের ব্যক্তিদের মাধ্যমে মাসোহারা নেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের কাছ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দকৃত নগদ টাকা ও খাদ্যশস্য ৪নং খর্ণিয়া ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচির কাজ করার লক্ষ্যে গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইউনিয়ন পরিষদের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯টি ওয়ার্ডে সমন্বয়ে কাজ হওয়ার কথা থাকলেও সেটা বাস্তবে হয়নি। সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে রেজুলেশন পাল্টিয়ে প্রভাবশালী দুই ইউপি সদস্যকে প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। অধিকাংশ ইউপি সদস্যরা এসব অভিযোগ করেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তথ্যমতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ৪নং খর্ণিয়া ইউনিয়নে ১ম পর্যায়ে বরাদ্দ দেয়, (কাবিখা-কাবিটা) নগদ অর্থ ৭ লাখ ৩২ হাজার ৪০০ টাকা ও ৪ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য এবং (টিআর) নগদ অর্থ বরাদ্দ ৫ লাখ ২০ হাজার ৬০০ টাকা।

এ বরাদ্দের মধ্যে ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোল্লা আবুল কাসেম ও ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শেখ রবিউল ইসলামকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে টাকা ও খাদ্যশস্য সহ প্রায় ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৩২০ টাকার কাজ। যার মধ্যে রয়েছে নগদ ৫ লাখ ৪১ হাজার ৩২০ টাকা ও ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা মূল্যের খাদ্যশস্য।

এছাড়াও মোল্লা আবুল কাসেমকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মাধ্যমে অতিরিক্ত আরও ৭.৬৩৮৬ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য প্রদান করা হয়েছে। অন্যদিকে বাকি ৭টি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৩ জন ইউপি সদস্যের মধ্যে ১ নং ওয়ার্ডে বরাদ্দ ২ লাখ টাকা, ৫ নং ওয়ার্ডে বরাদ্দ ২ লাখ টাকা ও ২,৪,৬ নং ওয়ার্ডে একত্রে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪০০ টাকা। সংরক্ষিত আসনের তিন মহিলা সদস্যা ও ৭ নং ওয়ার্ড এবং ৮ নং ওয়ার্ডকে উন্নয়নমূলক কাজ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করা হয়েছে।

সদ্য স্ট্র্যান্ডরিলিজ হওয়া মোঃ মনির হোসেন তার বিরুদ্ধের অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে বলেন, সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করা হয়েছে। এক যুগ ধরে ডুমুরিয়ায় চাকরি করছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

উল্লেখ্য, গত ১০ এপ্রিল খর্ণিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ দিদারুল হোসেন দিদার স্ট্রোকজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করায় চেয়ারম্যান পদটিতে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান ডুমুরিয়া উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর মোঃ মনির হোসেন। দায়িত্বে আসার পর থেকেই জনগণের ভোগান্তি বাড়তে থাকে এবং বৈষম্য আচরণ করার কারণে মেম্বারদের ভিতর এই দূরত্ব বাড়তে থাকে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন