খোলা তেল, খাবারে ভেজাল ও রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় খুলনায় ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতি বছর গড়ে চার হাজার নতুন রোগী তালিকাভুক্ত হচ্ছে। জেলায় এক লাখ ৩০ হাজার রোগী নিবন্ধিত হয়ে ডায়াবেটিক সমিতি ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। জেলায় আক্রান্তের তালিকায় সিংহভাগ নারী। ১০ বছরের শিশুও রয়েছে। এ রোগের চিকিৎসার ব্যয় ভার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। রোগী প্রতি মাসে দশ থেকে পনেরো হাজার টাকা।
করোনা ও ডেঙ্গু আতঙ্কের পর নিউমোনিয়া জুড়ে বসেছে জেলার সর্বত্র। এ নিয়ে ব্যস্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসকে কেন্দ্র করে নানা আয়োজন সমিতিতে। নড়ে চড়ে বসেছে এখানকার কর্মকর্তারা। এ দপ্তরে হিসাব কিতাব রোগীর সংখ্যা নিয়ে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এটি মরণব্যাধি। ধুকে ধুকে মরে। শরীর ভেঙে পড়ে। চেহারার পরিবর্তন হয়। ক’দিন বেঁচে থাকার জন্য ভরসা ইনসুলিন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এটি এমন রোগ যার কারণে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যক্ষমতা কমে যায়। এতে আক্রান্ত রোগীর হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেইলিউর, অন্ধত্ব, পায়ে পচন ধরতে পারে, এমনকি পা কেটে ফেলারও প্রয়োজন হতে পারে। বৈশ্বিক এই জটিল স্বাস্থ্য সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধে এখনই জনসচেতনতা এবং জনসম্পৃক্ততা জরুরি।”
খুলনা ডায়াবেটিক সমিতিতে গত বুধবার একশ’ ২০জন ও বৃহস্পতিবার ৬৭ জন নতুন ও পুরানো রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। এখানে ওষুধ পাওয়ার সুবিধা নেই। বছরে একজন রোগীকে একশ’ টাকা ফি দিতে হয়। নুরনগরস্থ ডায়াবেটিক হাসপাতালে ২২টি শয্যা থাকলেও সে ধরণের সেবা এখন বন্ধ রয়েছে। বাধ্য হয়ে রোগীকে খুমেক, খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতাল, গাজী মেডিকেল, আদদ্বীন, সিটি মেডিকেল ও ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়।
খুলনা ডায়াবেটিক সমিতির সিনিয়র মেডিকেল অফিসার জেলায় রোগীর সংখ্যা বাড়ার পেছনে চার কারণ উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়া, খাবারে ভেজাল, অলস জীবন ও অর্থনৈতিক সংকট। তিনি বলেছেন, “এর ফলে হৃদরোগ, কিডনী, লিভার, যৌন ক্ষমতা কমে যাওয়া ও অন্ধত্ব বেড়ে যাচ্ছে।”
নিয়মিত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ রায় একজন। নগরীর বাগমারা তেতুলতলা এলাকার বাসিন্দা। অগ্রণী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকতা ২০ বছর ধরে এ রোগে ভুগছেন। একই কিডনী রোগেও আক্রান্ত। প্রতিমাসে চিকিৎসা ব্যায় ১৫ হাজার টাকা। অপর একজন রুবিনা আক্তার। কৃষ্ণনগর এলাকার ইয়াসিন গাজির কন্যা। আট বছর বয়সে এ রোগে আক্রান্ত হন। এখন বয়স ৪০ এর কোটায়। অভিশপ্ত এ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় কুমারী জীবনের অবসান হয়নি তার।
খুলনা গেজেট/এনএম

