সোমবার । ৩রা নভেম্বর, ২০২৫ । ১৮ই কার্তিক, ১৪৩২

হাফিজের চোখ এবার নর্থ ওয়েস্টার্নে

নিজস্ব প্রতি‌বেদক

ব্যাংক লুটের শিরোমনি হিসেবে খ্যাতি পাওয়া সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেনের সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সৈয়দ হাফিজুর রহমান। ২০১৭ সালে লকপুর গ্রুপ ‘সাউথ ইস্ট ইউনিয়ন সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ কারখানার শুরু করলে হাফিজুরকে করা হয় প্রকল্প পরিচালক। বিশ্বস্ততার স্বীকৃতি হিসেবে হাফিজুর রহমানকে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের পরিচালক করা হয়। অধিকাংশ পরিচালক পক্ষে থাকায় তাদের ছত্রছায়ায় ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করেন এস এম আমজাদ হোসেন।

সেই আমজাদের অন্যতম সহযোগী সৈয়দ হাফিজুর রহমানের চোখ পড়েছে খুলনার প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে। গতবছর অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডে বড় ধরনের রদবদল হয়। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক শেখ মারুফুর রহমানের সহযোগিতায় হাফিজুর রহমান ও মিজানুর রহমান ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হতে আবেদন করেন। কিন্তু যৌথ মূলধনী কোম্পানি তাদের ট্রাস্টি সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেননি। তখন মারুফুল ইসলামের প্ররোচনায় বোর্ডের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন মিজানুর রহমান। হাফিজুর রহমানকে করা হয় সদস্য সচিব। এখন হাফিজই মূলত: বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালনা করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানা গেছে, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অফিস করার নিয়ম নেই। সৈয়দ হাফিজুর রহমান প্রতিদিন নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অবস্থান করেন। সেখানে কেনাকাটা, দরপত্র, নিয়োগ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। এ পর্যন্ত অনিয়মের মাধ্যমে ব্যক্তিগত কর্মচারীসহ বেশ কয়েকজনকে নিয়োগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে। এখন চলছে ভবন নির্মাণের কোটি টাকার দরপত্র ভাগবাটোয়ারার চেষ্টা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কর্মজীবনের বড় একটি সময় জাপানে ছিলেন সৈয়দ হাফিজুর রহমান। দেশে ফিরেই এস এম আমজাদ হোসেনের সঙ্গে ভিড়ে যান। তার জমিতেই লকপুর গ্রুপের কয়লাচালিত ‘সাউথইস্ট ইউনিয়ন সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৯৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্পও তৈরি হয়েছিল লুটপাটের পরিকল্পনা করে।

সূত্রটি জানায়, আমজাদ হোসেনের ঘনিষ্টজন এবং উপদেষ্টাদের মধ্যে হাফিজুর রহমান ছিলেন অন্যতম। আমজাদ হোসেন যখন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান তখন নিজের টাকা বিনিয়োগ দেখিয়ে হাফিজুর রহমানকে পরিচালক করেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক ওই সময় ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। খালেক তালুকদারেরও আস্থাভাজন ছিলেন হাফিজুর রহমান।

গতবছর অভ্যুত্থানের পর সৈয়দ হাফিজুর রহমান মহানগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতার আশ্রয়ে যান। আমজাদ হোসেনের মালিকানাধীন তিন তারকা মানের হোটেল উন্মুক্ত ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয় ওই নেতাকে। এর প্রতিদান হিসেবে বিএনপির কোটায় মিজানুর রহমান ও হাফিজুর রহমানকে নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত মে মাসে তারা দু’জনে মিলে বিশ্ববিদ্যালয়টি দখল করে নেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের প্রকৃত চেয়ারম্যান সিরাজুল হক চৌধুরী বলেন, সৈয়দ হাফিজুর রহমান ও মিজানুর রহমান ট্রাস্টি বোর্ডের বৈধ সদস্য নন। তাদের দেওয়া নিয়োগ, পদোন্নতিসহ সব ধরনের কর্মকান্ড সব অবৈধ। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব থেকে গত ৫ মাসে দুই কোটি টাকারও বেশি তুলে নিয়েছেন। বিষয়গুলো ইউজিসিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

প্রতিটি অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে হাফিজুর রহমান বলেন, “আইন মেনেই নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি সদস্য হয়েছি। বোর্ডের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে ইউনিভার্সিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ইউনিভার্সিটির প্রয়োজনে কিছু কাজে সহযোগিতা করি, এজন্য আমি কোনো ধরনের পারিশ্রমিক নেই না।”

তিনি বলেন, “সাউথ বাংলা ব্যাংকের ঋণ কেলেংকারির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী।”

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন