মঙ্গলবার । ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ । ১৯শে কার্তিক, ১৪৩২
পৌনে দু’শ বছর পর

বিজ্ঞানী পিসি রায়ের বাড়ি পূর্বের আদলে

কাজী মোতাহার রহমান

মারকিউরাস নাইট্রাইট নামক রাসায়নিক যৌগের আবিস্কারক বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায়ের বাড়ি পূর্বের আদলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এ বাড়ির পরিধি ছয় দশমিক ৪১ শতক। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ২৬লাখ টাকা দিয়ে বাড়ি সংস্কার ও সংরক্ষরণ কাজ করে। ১৮৫০ সালে যশোর জেলার খুলনা মহকুমার রাড়ুলী গ্রামে বিজ্ঞানীর পিতা হরিশচন্দ্র রায় বাড়িটি নির্মাণ করেন। তখন বৃটিশ জামানা। শাসনভার ছিল গভর্নর লর্ড ক্যানিং এর হাতে। এ বাড়ির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, এখানে ১৯৩০ সালে বৃটিশ বিরোধী লবণ আইন অমান্য আন্দোলন গড়ে ওঠে। এখানে বৃটিশ সৈন্য ও পুলিশের আঘাতে জনতার রক্তক্ষরণে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়। বিজ্ঞানী বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্বাধীনতা সংগ্রামী, কংগ্রেসের দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন।

প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর এর বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের বসত বাড়ি নামক এক প্রকাশনায় এ তথ্য প্রকাশ পায়। প্রকাশনায় বিজ্ঞানীর জীবনী, পিতার তত্ত্বাবধায়নে তৈরি বাড়ি, ভারতে কয়েকজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও খুলনার স্মরণীয় ও বরণীয় এ বিজ্ঞানীর ল্যাবরেটরীতে গবেষণারত ছবি স্থান পেয়েছে।

রঞ্জিত কুমার মন্ডল রচিত আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, রাড়ুলী মৌজায় বিজ্ঞানীর পৈত্রিক সম্পত্তির পরিমাণ ছয় দশমিক ৪৮শতক। এ ভিটের বড় একটা অংশ বেদখলে আছে। সেখানে নির্মিত হয়েছে ডাকঘর ও কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক। রায় পরিবারের কনিষ্ঠ পুত্র চারু চন্দ্র রায় দেশত্যাগ করেন। ১৯৬৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এ সম্পত্তি ভিপি সম্পত্তি তালিকাভুক্ত হয়।

সাংবাদিক ও গবেষক গৌরাঙ্গ নন্দী তার মানবপ্রেমী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র নাম গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ১৯৪৪ সালে বিজ্ঞানী মারা যান। শত্রু সম্পত্তি হিসেবে এ সম্পত্তি তালিকাভুক্ত হয়। পাকিস্তান সরকার এটি করলেও বাংলাদেশ সরকারও সেই উত্তরাধিকার বয়ে চলে। প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষণের ঘোষণা দেয়। তারপরও শত্রু তালিকা থেকে বাদ যায়নি এ সম্পত্তি।

১৯৮৬ সালে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক মোঃ আকামত আলী, তার স্ত্রী আমেনা বেগম চার একরের ওপর সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা দায়ের করে। এ মামলায় সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসককে বিবাদী করা হয়। রাড়লী গ্রামের নিমাই কুমার হরি বাদী হয়ে এক দশমিক ১৩ একর জমির মালিকানা দাবি করে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরকে বিবাদী করে উপজেলা সহকারী আদালতে মামলা দায়ের করে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আইনজীবী মোঃ আব্দুর রশিদ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন। ১৯৯৬ সালের ২০ আগস্ট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এক দশমিক ১৩ একর সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনে। ২০০০ সালে ১১ অক্টোবর গড়ে ওঠে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ। তারা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের দাবি তোলে। ২০০৩ সালের ১২ এপ্রিল উপজেলা ম্যজিস্ট্রেট অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। ২০০৯ সালে বাদী এজমি দখল করার চেষ্টা করে। সরকার পক্ষ মালিকানা দাবি করে উপজেলা সহকারী আদালতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।

পিসি রায় তার এক স্মৃতিচারণে উল্লেখ করেন, পৈত্রিক ভিটের সদর মহলের উত্তর পশ্চিম পাশে অন্দর মহল নামে মহিলাদের বসবাসের জন্য অট্টালিকা তৈরি করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সংস্কার ও সংরক্ষণের মাধ্যমে বাড়িটিতে শিক্ষা সফর, পর্যটক, জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপযোগী করে তুলেছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর আঞ্চলিক পরিচালক কার্যালয়, খুলনার ফিল্ড অফিসার মোছাঃ আইরিন পারভীনের ভাষ্য, বিজ্ঞানীর ব্যবহারের গামলা, কাঠের চেয়ার, কাঠের চৌকি, পাথরের বাটি, ১৫টি কাঁচের জগ, বিভিন্ন সাইজের নয়টি থালা পর্যটকদের জন্য রাখা হয়েছে। এ বাড়িটি এখন আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর তার প্রকাশনায় উল্লেখ করে, বিজ্ঞানীর পিতা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বাড়িটি নির্মাণ করেন। মূল বাড়িটি সদর ও অন্দর দু’ মহলে বিভক্ত। পৈত্রিক ভিটের উত্তর প্রান্তে পূজা মন্ডপ হিসেবে ব্যবহার হত। মন্দিরে আটটি মাল্টিফয়েল খিলান রয়েছে। বৃটিশ স্থাপত্য শৈলির সমন্বয়ে ভবনটি নির্মিত।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন