মঙ্গলবার । ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ । ১৯শে কার্তিক, ১৪৩২
ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট

বটিয়াঘাটার সুন্দরমহল এলাকায় রাস্তার কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বটিয়াঘাটা উপজেলার সুন্দরমহল এলাকায় রাস্তার কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে নিম্নমানের ইট দিয়ে রাস্তার কাজ করায় সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বটিয়াঘাটা উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন তহবিলের আওতায় বটিয়াঘাটা এলজিইডি আওতায় সুরখালি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড সুন্দরমহল এলাকায় এই রাস্তার উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়েছে।

কাজটি পেয়েছেন রূপসার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীর কবির বিশ্বাস। উক্ত প্রকল্পের আওতায় ৩টি প্যাকেজে মোট ১৬ লাখ টাকার চুক্তিমূল্যে কাজটি শুরু হয়েছে। প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে, ১নং সুন্দরমহল পিচের রাস্তা হতে মিলন বিশ্বাসের বাড়ি অভিমুখী ১২০ মিটার আরসিসি রাস্তা নির্মাণ কাজ। যার প্রাক্কলিত মূল্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ লাখ টাকা। ২নং সুন্দরমহল রুহুল আমিনের বাড়ি হতে মহাসিন বিশ্বাসের বাড়ি অভিমুখী পর্যন্ত ১১৫ মিটার ইটের সলিংয়ের (বিএফএস) রাস্তা নির্মাণ কাজ। প্রাক্কলিত মূল্য ব্যায় ধরা হয়েছে ২ লাখ টাকা। ৩নং সুন্দরমহল শুকুর আলীর দোকান হতে ইয়াসিন আরাফাতের বাড়ি অভিমুখী ইট সলিংয়ের (বিএফএস) রাস্তা নির্মাণ কাজ ২৭০ মিটার। প্রাক্কলিত মূল্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ টাকা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ‘কাজে ব্যবহৃত ইটের মান অত্যন্ত খারাপ ও নিম্নমানের। নম্বর বিহীন ইট দিয়ে চলছে এই রাস্তার কাজ। কাজ শুরু হওয়ার পর ইটের মান নিয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও ঠিকাদার তাতে কর্ণপাত করেনি। একপর্যায় গতকাল মঙ্গলবার ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইটের সলিংয়ের কাজের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “রাস্তায় ব্যবহৃত ইটগুলো অত্যন্ত খারাপ। তারা ভালো ইট দিয়ে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।”

৭০ বছর বয়সি আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস ও শুকুর আলী গাজী বলেন, “আমরা চাই রাস্তার উন্নয়ন হোক, কিন্তু এই ধরনের উন্নয়ন আমরা চাই না। আমাদের বয়সে অনেক রাস্তা দেখেছি, কিন্তু এ কেমন দুর্নীতি। দেশে আইন বলতে মনে হয় কিছুই নেই।”

স্থানীয় আওয়াল হোসেন, সেলিম, আতিকুর, নাজি বিবি, মাফুজা ও স্বপ্না বেগম বলেন, “রাস্তার কাজে চরম অনিয়ম দুর্নীতি হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করলে তারা আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা এ ধরনের রাস্তা চাই না। আমাদের মাটির রাস্তাই ভালো ছিল।”

৬ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি আবুল কাশেম গাজী ও সুরখালি ইউনিয়নের জামায়াতে ইসলামীর আমির মোহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত বলেন, “আমরা চাই এই রাস্তার উন্নয়ন হোক। কিন্তু এই ধরনের নিম্নমানের ইট ব্যবহার করে কাজ করলে কিছুদিনের মধ্যে রাস্তাটি আবার ভেঙে যাবে। আমরা চাই যথাযথ মানের ইট ব্যবহার করা হোক।”

ইউপি সদস্য জিএম এনামুল গাজী বলেন, “শুনেছি কাজের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। রাস্তায় যেসব ইট দিয়ে কাজ করা হচ্ছে তা ব্যবহারের অনুপযোগী। আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

এলাকাবাসী কাজের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ শুনে আমরা সবাই সংশ্লিষ্ট বটিয়াঘাটা (এলজিইডি) ইঞ্জিনিয়ার অফিসের কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। কিন্তু কাজ বন্ধ হচ্ছে না। জানি না কোন্ অপশক্তির দাপটে ঠিকাদার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। জরুরি ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার জোর দাবি জানান তারা।

সুরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন লিটু বলেন, “কাজে অনিয়ম দুর্নীতি হচ্ছে, সংবাদ শুনে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।”

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীর কবির বিশ্বাস বলেন, “কিছু ইটে সমস্যা আছে। সেগুলো ইঞ্জিনিয়ার অফিস থেকে ফেরত দিতে বলেছে। আমি সেগুলো ফেরত দিব।”

বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী গৌতম কুমার মন্ডল বলেন, “কাজে ইটের মান নিম্নমানের সংবাদ শুনে আমি ঠিকাদারকে বলেছি, ইট গুলো পরিবর্তন করতে। বর্তমান কাজটি বন্ধ রয়েছে।”

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন