বুধবার । ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২০শে কার্তিক, ১৪৩২
৫ মাস ধরে অবৈধ দখলে খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি

রাজনৈতিক মদদে বিশ্ববিদ্যালয় দখল, চলছে অবাধ লুটপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় খল হয়ে গেছে খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। গত ২১ মে থেকে নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। গত ৫ মাস ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে চলছে অবাধ লুটপাট। অনুমোন হওয়া ভবনের নকশা নতুন করে তৈরি এবং পুনরায় অনুমোদনের নামে কয়েক লাখ টাকা তছরূপ করা হয়েছে। আয়োজন চলছে কয়েকটি কোটি টাকার ভবনের নির্মাণের দরপত্র ভাগবাটোয়ারার।

এসবের বাইরে অনুমোদিত ট্রাস্টি না হয়েও সম্মানী হিসেবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মিজানুর রহমান ও হাফিজুর রহমান নামের দুই ব্যক্তি। অভিযোগ রয়েছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়টি ইচ্ছে মতো লোক নিয়োগ করছেন। তারে অপতৎপরতায় কেউ যাতে বাঁধা না দেন-এজন্য বিএনপি নেতা, নেতার ভাই-স্বজনদেরও চাকরি দেওয়া হচ্ছে।

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) অভিযোগ দিয়েও ফল পাচ্ছেন না অনুমোদিত ট্রাস্টিরা। বিএনপির এক শীর্ষ নেতার সুপারিশে ইউজিসি ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করছে বলে তাদের অভিযোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর অনুমোদন হয় খুলনার প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। পরের বছর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে তারা। শুরুতে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেসিসির সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর খালেক আত্মগোপনে চলে যান। ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হন সিরাজুল হক চৌধুরী।

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মিজানুর রহমান, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি আজিজুর রহমান ও সৈয়দ হাফিজুর রহমানকে ট্রাস্টি বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সূত্রটি জানায়, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হতে যৌথমূলধনি কোম্পানি থেকে নিবন্ধন প্রয়োজন। কিন্তু ওই দু’জন কোনো নিবন্ধন নেননি।

বিষয়টি নিয়ে সিরাজুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ট্রাস্টি বোর্ডে আমি ছাড়া সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের। বোর্ডে বিএনপির লোক বাড়নোর জন্য মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনার পরামর্শে নতুন তিনজন যুক্ত করা হয়।’

গত ২১ মে ট্রাস্টি বোর্ডের সভা ডেকে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন মিজানুর রহমান। হাফিজুর রহমানকে করা হয় সদস্য সচিব। এরপর থেকে সিরাজুল হককে সরিয়ে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন মিজানুর। সিরাজুল হক চৌধুরীসহ উদ্যোক্তারা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পারছেন না।

অভিযোগ রয়েছে, খুলনা মহানগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতার ইন্ধনে অন্য ট্রাস্টিদের ভয় দেখিয়ে বোর্ড সভায় তাদের পক্ষে কথা বলতে বাধ্য করা হয়। কেউ যাতে এর প্রতিবাদ করতে না পারে সেজন্য ট্রাস্টি সদস্য তৌহিদুল ইসলাম আজাদ, সৈয়দ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ ও পবিত্র কুমার সরকারকে বিএনপির সমাবেশে হামলার মামলার আসামি করা হয়। এই মামলায় ১৫৬ আসামির বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ কর্মকর্তা।

সূত্রটি জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজেদের লোক বসানো শুরু করেন মিজানুর ও হাফিজুর। প্রথম পদক্ষেপে উপাচার্যকে সরিয়ে ট্রেজারার কানাই লাল সরকারকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ড. শেখ শফিকুর রহমানকে রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল হক বাবুলকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে। এছাড়া নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুর রশিদ মিরাজের ভাই চৌধুরী হাবিবুর রশিদ রুম্মানসহ মিজানুর রহমান ও হাফিজুর রহমানের আত্মীয় স্বজনদের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক চৌধুরী বলেন, যৌথ মূলধনী ফার্মে নিবন্ধন এবং ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া ট্রাস্টি বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। তারা যা করছে সবকিছু অবৈধভাবে করছে। ভুয়া চাকরি এবং নকশা তৈরির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা যাতে আত্মসাত করতে না পারে-এজন্য ব্যাংকে আমি চিঠি দিয়েছি। কিন্তু চাপের কারণে ব্যাংকও কথা শুনছে না। ইউজিসিতে চিঠি দেওয়ার পর তারা এই সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও তারা মানছে না। খুলনার মানুষের একটি প্রতিষ্ঠান লুটপাটের কারণে বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করে মিজানুর রহমান বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার আগে জমি কেনা, ভবন নির্মাণের জন্য কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। ট্রাস্টিরে বেতন নেওয়ার সুযোগ নেই, অথচ এখান থেকে বেতন নেওয়া হয়েছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে এসব বন্ধ করেছি।

তিনি বলেন, যৌথ মুলধনী প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চলছে। ইউজিসি আমাদের ট্রাস্টি হিসেবে মেনে নিয়েছে। বোর্ড সদস্যরা আমাকে চেয়ারম্যান করেছে-এখানে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হয়নি। নিয়োগ, অর্থ ছাড় সব কিছু নিয়ম মেনেই হচ্ছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন