বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) নির্বাচনে পরিচালক পদে জিততে পারেননি খুলনার শীর্ষ ঋণখেলাপী ঢাকা ট্রেডিং হাউজের মালিক টিপু সুলতান। গত ১৮ অক্টোবর অর্ডিনারি গ্রুপের ১২টি পরিচালক পদে নির্বাচনে ১০৯ ভোট পেয়ে ১৩তম হয়েছেন তিনি।
এদিকে সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুর ২টায় অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচিত অর্ডিনারি গ্রুপের ১২ জন পরিচালক এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত অ্যাসোসিয়েট গ্রুপের ৬ পরিচালক তাদের মধ্যে থেকে তিন জনকে ওই তিন পদে নির্বাচিত করবেন। চেয়ারম্যান পদে দৌড়ে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ আহমেদ আকন্দ পম্পি।
অভিযোগ রয়েছে, ২০২৩ সালে সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নজান সুফিয়ানের হস্তক্ষেপ চেয়ারম্যান হন পম্পি। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক খুলনা শাখায় প্রায় ২১ কোটি টাকা খেলাপী ঋণ রয়েছে তার।
ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে নভেম্বর মাসে পাট রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেয় তৎকালীন সরকার। পরবর্তীতে বিশেষ বিবেচনায় ৪৮ জন ব্যবসায়ীকে পাট রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। ওই সময় ৪৭ জন পাট রপ্তানি করলেও ফরহাদ আহমেদ আকন্দ পম্পি পাট রপ্তানি করেননি। পাট রপ্তানির জন্য ব্যাংক থেকে নেওয়া ২১ কোটি টাকার বিশেষ ঋণও পরিশোধ করেননি। গত ১০ বছর সেই টাকার জন্য ঘুরছে ব্যাংক। খেলাপী ঋণ নিয়ে গত দুই বছর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। এছাড়া বিগত কয়েকবছর ধরে পাট রপ্তানির সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততা কম।
ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের প্রায় হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করে খুলনায় এসে পাটের ব্যবসা শুরু করেন ঢাকা ট্রেডিং হাউজের মালিক টিপু সুলতান। জনতা ব্যাংকের ৬৯২ কোটি টাকার খেলাপী ঋণ আদায়ের টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা করেছে ব্যাংক। জনতা ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করে দুদক। দুটি মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এর বাইরে এবি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক তার কাছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে টিপু সুলতানের। এর বেশিরভাগ এখন খেলাপী।
এই অবস্থাতেও বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) নির্বাচনে লড়তে ভোটার তৈরি করেন টিপু সুলতান। এক পর্যায়ে তাকে বিএনপি সমর্থিত প্যানেলে নেওয়া হয়।
গত ১৮ অক্টোবর খুলনা ও নারায়ণগঞ্জের দুটি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১০৯ ভোট পেয়ে ১২টি পরিচালকের মধ্যে ১৩তম হয়েছেন টিপু। এর মধ্যে খুলনা কেন্দ্রে তিনি ৯২ ভোট এবং নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রে ১৭ ভোট পান। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে দ্বিতীয় পর্বে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন সোমবার নারায়ণগঞ্জ বিজেএর প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ১২টায় চেয়ারম্যান পদে ১ লাখ, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫০ হাজার এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে মনোনয়নপত্র কিনতে হবে। দুপুর ২টায় নির্বাচিত ১৮ জন পরিচালক তাদের মধ্যে থেকে তিন জনকে ওই পদে নির্বাচিত করবেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, ১৮ জন পরিচালকের মধ্যে ১৫ জনের বাড়ি খুলনা। এজন্য চেয়ারম্যান ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে খুলনার ব্যবসায়ীরাই নির্বাচিত হবেন। একটি ভাইস চেয়ারম্যান পদে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের প্রার্থী করা হবে। চেয়ারম্যান পদে ফরহাদ আহমেদ আকন্দ পম্পি ও খন্দকার আলমগীর কবিরের নাম আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যে পম্পি জয়পুরহাট আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রাজ্জাক আকন্দের ছেলে এবং দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সদস্য। অন্যদিকে খন্দকার আলমগীর কবির সরকারি রাজনীতিতে জড়িত না হলেও বিএনপি সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তাদের মধ্যে থেকেই একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারেন।
এ ব্যাপারে খন্দকার আলমগীর কবির বলেন, ‘অনেকেই ভোট করতে বলছেন, কাল মনোনয়নপত্র কেনার আগে কিছু বলতে পারছি না।
ফরহাদ আহমেদ পম্পি বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
খুলনা গেজেট/এনএম

