খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) র্যাগিং, মারামারি, ধর্ম অবমাননা ও মাদকসহ বিভিন্ন শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকা-ের অভিযোগে ১২ জনকে বহিষ্কারসহ মোট ১৯ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত ৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা বোর্ডের ২৭তম সভায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তর থেকে প্রকাশিত অফিস আদেশে জানানো হয়, অপরাধের মাত্রাভেদে শিক্ষার্থীদের স্থায়ী বহিষ্কার, সাময়িক বহিষ্কার ও আর্থিক জরিমানার মতো বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষকের উপর আঘাতের অভিযোগে বাংলা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মোঃ মোবারক হোসেন নোমানকে স্থায়ী বহিষ্কার, সনদ বাতিল ও ক্যাম্পাসে আজীবন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় মানবিক বিবেচনায় তার সনদ বাতিলের সিদ্ধান্তটি শর্তসাপেক্ষে স্থগিত করা হয়েছে।
মাদক সেবন, ক্রয় ও বিক্রয়ের অভিযোগে অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের হাসান হাওলাদার এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের আমিনুল ইসলামকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে মারামারির ঘটনায় আইন ডিসিপ্লিনের মোঃ জাহিদুল ইসলামকে স্থায়ী বহিষ্কারের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। একই অভিযোগে আইন ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেরাফ হোসেন রাব্বী ও আমিনুল এহসানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আচরণ শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ পরিপন্থী কোনো কাজে জড়িত না হওয়ার শর্তে অভিভাবকসহ মুচলেকা প্রদান করা হয়েছে।
র্যাগিংয়ে সম্পৃক্ততার দায়ে গণিত ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী কে এম রাউফুল আলম অর্নবকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার ও মোঃ রিমন মিয়া, আহসান হাবীব এবং মোঃ সালমান হোসেনকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অভিভাবকসহ মুচলেকা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ক্যাম্পাসে মারামারির ঘটনায় শিক্ষা ডিসিপ্লিনের মোঃ উমর ফারুক, সাদমান উদ দৌলাকে বর্তমান টার্মের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার এবং ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের মনিরুজ্জামান রিয়াদ ও শিক্ষা ডিসিপ্লিনের জিয়াদ আল সামসকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অভিভাবকসহ মুচলেকা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে গণিত ডিসিপ্লিনের আরো তিন শিক্ষার্থী বাবুল আক্তার দুর্জয়, রাশেদ খান মেনন এবং বাঁধন রায়কে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের মোঃ রাসেল শেখকেও স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। একই অভিযোগে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের তনয় রায়কে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর গত ৫ আগস্ট থেকে মোঃ রাসেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনকে বিভিন্নভাবে কটাক্ষ করতে থাকেন। এছাড়া তিনি ইসলাম ধর্মের বিধিবিধান, আল্লাহ, কুরআনের আয়াত ইবাদত এবং আলেম সমাজ নিয়ে একাধিকবার অবমাননাকর পোস্ট করেন। তিনি জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের ‘লাল গেঞ্জি’ বলেও কটাক্ষ করেন এবং মুসলিমদের ধর্মীয় ফরজ বিধান ‘জিহাদ’ নিয়েও অবমাননাকর মন্তব্য করেন। একই ব্যাচের শিক্ষার্থী তনয় রায়ের বিরুদ্ধেও ইসলাম ধর্মের ফরজ বিধান নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে মো. রাসেল নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রমে জড়িত থাকতে পারেন বলেও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়ার পরই এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি আঘাত হানার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পদক্ষেপকে শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানিয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এমএম

