স্বপন বিশ্বাস, মাছ ধরেই করেন জীবিকা নির্বাহ। তবে দুর্গোৎসবের কারণে নিজ পেশায় এনেছেন ভিন্নতা। মাছ ধরা বাদ রেখে খুলনার তেরখাদার ভুতিয়ার বিলে ডিঙি নৌকায় করে রাতভর ৫০০ থেকে ৬০০ পিস পদ্ম ফুল তোলেন। ভোরের আলো ফুটতেই সেই ফুল সাজিয়ে নগরীর হেলাতলা বাজারে নিয়ে আসেন স্বপন। সেখানেই বিক্রি করেন তিনি। পদ্ম ফুলে আকৃষ্ট হয়ে কিনছেন ফুলপ্রেমীরা। প্রতি পিস ফুল ২ থেকে ৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। সবমিলিয়ে দিনে ১১০০-১২০০ টাকা বিক্রি হয়। তবে এটি প্রতিদিন নয়। দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে ৪/৫ দিনের পেশা তার। পূজো শেষে ফের ফিরবেন নিজ কর্ম মাছ ধরতে।
খুলনার হেলাতলা মোড়ে পদ্ম ফুল নিয়ে আসা স্বপন বিশ্বাস বলেন, “পদ্ম ফুল মূলত দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজা ও কালীপূজাসহ প্রায় সব ধরনের পূজায় লাগে। পূজায় ভক্তরা ফুল কেনেন। অনেকে আবার হাতে কয়েকটি ফুল নিয়ে ঘোরার জন্যও কিনে নেন।”
এবার ভূতিয়ার বিলে প্রচুর পদ্ম ফুল ফুঁটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অন্য বছর লবণ পানিতে তেমন পদ্ম ফুল পাওয়া যেত না, তবে দাম মোটামুটি পাওয়া যেত। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি বেশি হওয়ায় মিঠাপানিতে প্রচুর ফুল ফুঁটেছে। ফলে চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি থাকায় দাম কিছুটা কম। ভালো মানের পদ্ম ফুল পাঁচ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে, মাঝারি মানেরগুলো দুই থেকে তিন টাকায়। আর খুব ছোট ফুল একসঙ্গে দুটো দিয়ে এক টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “তেরোখাদা ভুতিয়ার বিলে আমরা রাতে পদ্ম ফুল তুলতে যাই। ফুল তুলে ঘাটে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভোর হয়ে যায়, তখন আজান শোনা যায়। সেখান থেকে হেলাতলা বাজারে এসে বসতে বসতে সকাল ৮-৯টা বাজে। তারপর সারাদিন বেচাকেনা করি, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যাই। ভালো বিক্রি হলে একদিনে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এই টাকাতেই পূজোর সময় পাঁচ জনের সংসার চলে যায়। তবে পূজার মৌসুম শেষে আর পদ্ম ফুলের তেমন চাহিদা থাকে না। তখন মাছ ধরা কিংবা দিনমজুরের কাজ করি।”
স্বপনের পাশে ফুল নিয়ে বসেছিলেন তেরখাদার শান্তি বিশ্বাস। তিনি বলেন, “ভোররাতে আমার স্বামী নদীতে পদ্ম ফুল তুলতে যান। সাধারণত সকাল ৮টা-৯টার মধ্যে তিনি ফিরে আসেন। তারপর সেই ফুলগুলো আমি নিজে বিক্রি করি। আবার অনেক সময় আমার স্বামীও বিক্রির কাজে সাহায্য করেন। দুর্গাপূজায় ১০৮ টি পদ্মফুল প্রয়োজন হয়। পূজোর সময়ে এই ফুলের কদর বেশি থাকে। তবে এ বছর তেমন বেচাকেনা হচ্ছে না। ১০০ পিস ফুল ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করি। ফুলের মান অনুযায়ী যার কাছে যেমন সুযোগ হয়, সেভাবেই বিক্রি করি।”
তিনি বলেন, “আমার স্বামী কৃষিকাজ করে এবং সেই আয়ে পাঁচ জনের সংসার চলে। তবে পূজোর মৌসুমে আমি পদ্ম ফুল বিক্রি করে সংসারে কিছুটা সহযোগিতা করি।”
শুধু স্বপন আর শান্তি নয়, হেলাতলা মোড়ে অন্তত ৬-৭ জন পদ্ম ফুল এনে বিক্রি করেন।
খুলনা গেজেট/এনএম