মঙ্গলবার । ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ । ১লা আশ্বিন, ১৪৩২

‘ট্যাংকি খোকা’ খ্যাত এমপি পুত্র দ্বীপ্ত’র যত কুকীর্তি

আজগর আলী সাব্বির

ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া খুলনা-১ আসনের সাবেক এমপি পুত্র দ্বীপ্ত মণ্ডলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। সরকার পতনের পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাকে ‘ট্যাংকি খোকা’ নাম দিয়েছে।

গেলো বছর ৫ আগস্ট পতন হওয়া সরকার দলীয় এমপি ননী গোপাল মণ্ডলের পুত্র দ্বীপ্ত মন্ডল গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। তার নামে ২৬ নভেম্বর’২৪ দাকোপ থানায় নাশকতা মামলা রয়েছে। এমপি পুত্র গ্রেফতারের খবর এলাকায় প্রচার হলে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে।

জানা গেছে, ননী গোপাল মন্ডল এমপি হওয়ার পর একমাত্র সন্তান দ্বীপ্তকে নিজ নির্বাচনী এলাকা দাকোপ-বটিয়াঘাটার সকল বিষয় দেখভাল এবং উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষমতা দেয়। এমপি’র কাছে স্থানীয় পর্যায়ের সাধারণ মানুষ, দলীয় নেতাকর্মী এমনকি জনপ্রতিনিধিবৃন্দ কোন বিষয় নিয়ে গেলে তিনি বলতেন “খোকার সাথে যোগাযোগ কর।” দ্বীপ্ত মন্ডল ওরফে খোকার বাইরে সরকারি কর্মকর্তারাও কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না।

গত ৫ আগস্ট ২০২৪ সরকার পতনের পর দ্বীপ্ত দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায়। তখন থেকে তার অপকর্মের কাহিনি ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে। সব থেকে বেশি আলোচনায় এসেছে টাকার বিনিময়ে সরকারি পানির ট্যাংকি বিতরণের বিষয়টি। ননী গোপাল মণ্ডলের বরাদ্দের প্রতিটি সরকারি ট্যাংকির বিপরীতে দ্বীপ্ত ওরফে খোকা নিয়েছেন ৫ হাজার করে টাকা। এমনকি অগ্রিম টাকা নিয়ে তালিকা করে রেখেছেন এমন লোকের সংখ্যা কয়েক শ’।

এভাবে ট্যাংকি খাত থেকে দ্বীপ্ত হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। যে কারণে দ্বীপ্ত দেশ ছাড়ার পর এ ঘটনা ব্যাপক আলোচনায় আসলে দাকোপবাসী তাকে ‘ট্যাংকি খোকা’ নামে ডাকা শুরু করে। সেই অসহায় গরীব পরিবারগুলো এখন কেবল হা-হুতাশ করছেন। অনেকে আবার যাদের মাধ্যমে দ্বীপ্ত’র হাতে টাকা তুলে দিয়েছে তাদেরকে চাপ দিচ্ছে টাকা ফেরতের জন্য। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে চাকুরি দেওয়ার নামে অনেকের কাছ থেকে নিয়েছেন বড় অঙ্কের টাকা। বিভিন্ন কাজে টাকা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা যে কোন ভাবে টাকা আদায়ে দেন দরবার করে যাচ্ছেন। যদি কোন ভাবে টাকা ফেরত পাওয়া যায় এই আশায় তারা এই মুহূর্তে কোন আইনী ব্যবস্থা বা অভিযোগ দাখিলে আগ্রহী নয়। কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলে টাকা ফেরতের সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায়না। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে কাবিখা, কাবিটাসহ সকল উন্নয়ন কাজের বরাদ্দের একমাত্র নিয়ন্ত্রণ কর্তা ছিলেন এমপি পুত্র দ্বীপ্ত।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বররা তৎকালীন দ্বীপ্তের সাথে ভাগাভাগির চুক্তিতে প্রকল্প গ্রহণ করতে বাধ্য হতেন। তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সবসময় দ্বীপ্তের কৈলাশগঞ্জের পৈত্রিক নিবাসে হাজিরা দিয়ে তাঁকে তুষ্ট রাখতে সচেষ্ট ছিল। স্বনামে বেনামে দ্বীপ্তের ছিল ঠিকাদারি ব্যবসা। তৎকালীন বটিয়াঘাটার জনৈক ঠিকাদার দ্বীপ্তের হয়ে কাজ করতেন বলে জানা যায়। এছাড়া এলাকার বালি ব্যবসার একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন এই দ্বীপ্ত মন্ডল ওরফে খোকা। সর্বশেষ তিনি চালনায় ডাকবাংলা মার্কেটের দোতলায় নিজের ব্যক্তিগত অফিস নেয়। সেই অফিসের সাজ-সজ্জার কাজ চলাকালীন সরকার পতন হয়। সরকার পতনের মাস খানেক আগে এক দাগে কোটি টাকার সম্পদ ক্রয়ের কথা শোনা যায়।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন