জলাবদ্ধতায় খুলনার দু’উপজেলার ৬০ গ্রাম প্লাবিত। দু’বছর ধরে পানিতে এ অঞ্চলের মানুষ খাচ্ছে হাবুডুবু। ব্যাহত হচ্ছে ধান চাষ। প্রতিবছর অতিবৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার মাছে ঘের। নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর সবজির ক্ষেত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর উদাসীন। তড়িৎ করণীয় নির্ধারণে নবাগত জেলা প্রশাসক বেশ কয়েকটি দপ্তর প্রধানকে নিয়ে করেছেন বৈঠক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে প্রকাশ করেছেন হতাশা। কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে সকলকে দিয়েছেন কড়া নির্দেশনা। জেলা প্রশাসন ও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
গেল রবিবার যোগদান করেছেন খুলনার নয়া জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিকুর রহমান। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে খুলনার মৌলিক সমস্যা নিয়ে খোঁজ নিতে শুরু করেছেন। বুধবার গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে করেন মতবিনিময়। ওই সভায় অধিকাংশ গণমাধ্যমকর্মী জলাবদ্ধতার ভয়াবহতা ও রাস্তাঘাটের বেহাল দশাসহ বেশ কয়েকটি সমস্যা সম্পর্কে তাকে কাজ করার তাগিদ দেওয়ার অনুরোধ করেন।
এদিকে খুলনা গেজেটে জলাবদ্ধতা নিয়ে চলছে ধারাবাহিক প্রতিবেদন। তাছাড়া অধিকাংশ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মাঝেমধ্যে ডুমুরিয়া ও ফুলতলার জলাবদ্ধতার চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। যে কারণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠকে বসেন তিনি। ওই বৈঠকে খুলনাঞ্চলের জলাবদ্ধতার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি প্রাথমিক ধারণা নেন। দু’বছর ধরে চলমান কার্যক্রম এবং জনগণের বর্তমান চাহিদা কি সে সর্ম্পকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরদের কাছে ব্যাখ্যা চান। এ সময়ে তিনি দীর্ঘ দিন জলাবদ্ধতা স্থায়ী হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রমে ধীরগতির কারণে হতাশা ব্যক্ত করেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান পরিবেশের ছাড়পত্র না থাকায় ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্প পাসে করণীয় সবকিছু দ্রুত সম্পন্ন করে আগামী শুকনো মৌসুমে যাতে কাজ শুরু যায় সে ব্যাপারে সকলকে তাগিদ দেন তিনি।
শাহাপুর- দৌলতপুর সড়কের টোলনাস্থ কালভার্ট দিয়ে ডাকাতিয়া বিলে পানি প্রবেশ নিয়ে দু’গ্রুপের বিরোধ দীর্ঘ দিনের। এনিয়ে মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। সে ব্যাপারে খোঁজ খবর নেন। তাছাড়া খুব দ্রুত ওইস্থানসহ জলাবদ্ধ সকল এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার পাল, পওর বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জামাল ফারুক, ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আমানউল্লাহ ও বরুনা বিল কমিটির সভাপতি মোস্তাক আহম্মেদ।
জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিকুর রহমান বলেন, খুলনার জলাবদ্ধতা একটি বড় সমস্যা। কোথায় কোথায় সমস্যা এবং এখন দ্রুত কি করণীয় সে সম্পর্কে জানতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছোট পরিসরে একটি বৈঠকে কিছু ধারণা নিয়েছি। আগামী সপ্তাহে বড় পরিসরে সকল স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। জনগণের ভোগান্তি লাঘবে যতদ্রুত সম্ভব জলাবদ্ধতা দুর করতে সব ধরনের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এমএম