কপিলমুনি কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী পুজা হালদার (২৩)। সে ঢাকার লায়ন আই ইনস্টিটিউট বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গতকাল মঙ্গলবার ছাড়পত্র দিয়েছেন।
গত মাস দুই আগে ডান পায়ের হাঁটুর উপর উরুতে টিউমারে আক্রান্ত হয় সে। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা শেষে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে চিকিৎসার পর টাকার অভাবে বাড়িতে ফিরে আনা হয়েছিল। পরবর্তীতে পায়ের অবস্থার অবনতি দেখা দিলে পরিবারের সদস্যরা তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ভর্তি করেন। সেখানে তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়েছে। পায়ের ব্যান্ডেজ এখনো খোলা হয়নি। ক্ষত শুকায়নি। আগামী মাসে আরও একটি অস্ত্রোপচার করতে হবে। আবারো প্রয়োজন কয়েক লাখ টাকা।
মেয়ের শোকে পিতা নির্মল হালদার অন্ধ হয়ে গিয়েছেন। নদী থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রয় করে স্ত্রী, তিন ছেলে চার মেয়ে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ সবই চলত তাঁর আয়ে। ছোট ছেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। তারপর মেয়ে পঙ্গু হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গতকাল মঙ্গলবার তাকে রিলিজ দিয়েছেন।
অন্ধত্ব জীবন নিয়ে তিনি এখন কর্মহীন হয়ে পড়ায় পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। খুলনা জেলা পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের কাশিমনগর (মালোপাড়া) গ্রামের নির্মল হালদারের মেয়ে পূজা হালদার।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ একটি টিনশেড ঘরের খাটের ওপর শুয়ে রয়েছেন নির্মল হালদার। আলাপকালে তিনি বলেন, “অভাবের মধ্যে দিয়ে আমার উপার্জনে সংসার চালিয়ে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ কোনো রকম চলছিল। এখন তো কর্মহীন হয়ে পড়ে বিপাকে আছেন।”
মেয়ে পুজা হালদার কপিলমুনি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। মাস দুই আগে তাঁর ডান পায়ের উরুতে একটি গুটি আকৃতির টিউমার দেখা যায়। এরপর স্থানীয় ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসার পর খুলনা ও সাতক্ষীরা ডাক্তার দেখান। পরে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে অর্থোপেডিক ডাক্তার দেখিয়ে টাকার অভাবে আবার বাড়িতে চলে আসেন। এর কিছুদিন পর তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এরপর ঢাকার লায়ন আয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে ভর্তির পর চিকিৎসকের পরামর্শে তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়েছে। প্রথমদিকে চিকিৎসা খরচ নিজেরা চালিয়েছেন। এ পর্যন্ত পূজা হালদারের চিকিৎসায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখনও তার পুরো সুস্থ হতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সেই খরচ জোগাতে না পারায় অন্ধ পিতা নির্মল হালদার ঢুকরে ঢুকরে কেঁদে উঠছেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
মা ভানিদাসী হালদার আহাজারি করে বলেন, “মেয়েটা পঙ্গু হয়ে গেছে, স্বামী অন্ধ, ছোট ছেলেটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আমোগো সংসার ক্যামনে চলবে জানি না।”
আক্ষেপ করে তিনি আরও বলেন, তাঁর মেয়ে মনে হয়, আর কোনোদিন কলেজে পড়তে পারবেন না। মেয়ের চিন্তায় স্বামী অন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন মেয়ের ওষুধ ও সংসার কীভাবে চলবে তা জানেন না। কিছুদিন পর মেয়ের পায়ে দ্বিতীয় বার অস্ত্রোপচার করতে হবে। তাই তিনি মেয়ে পূজা হালদারের জন্য সমাজের বিত্তবানদের একুটু সহানুভূতি কামনা করেছেন। যোগাযোগ ও সাহায্যে পাঠানোর বিকাশ নম্বর-০১৭৭১-১৯৬৬৬৫।
খুলনা গেজেট/এনএম