খুলনায় ফেরি-ট্রলার মুখোমুখি সংঘর্ষের ১২ ঘন্টার অধিক সময় পার হওয়ার পরও নিখোঁজ আকাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। রাতে ফায়ার সার্ভিস ও নৌপুলিশের সাথে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেন কোষ্টগার্ডও। তারা জেলখানা নদী থেকে শুরু করে শৈলপুর ঘাট পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আকাশের খোঁজ পায়নি। রাতে বন্ধ হয়ে যাওয়া উদ্ধার অভিযান সকাল থেকে আবারও শুরু হয়েছে। তবে এ ঘটনার পর থেকে খেয়াঘাট পারাপার নিয়ে দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
টুটপাড়া ফায়ার সার্ভিস অফিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো: জাকির হোসেন জানান, রাত সাড়ে ১০ টার দিকে খবর পেয়ে ১১ টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আকাশের সন্ধানে রাত সাড়ে ১২ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত নদীতে অভিযান চালানো হয়। এরপর উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সকাল ৭ টা থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়। কিন্তু বেলা ১২ টা পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাদের সাথে অভিযানে ৭ জন ডুবরী অংশ নিয়েছে।
কোষ্টগার্ড মোংলার পেটি অফিসার নাজমুল ইসলাম বলেন, রাতে ৪ জন ডুবরী নিয়ে মোংলা থেকে খুলনায় এসেছি। রাতে অভিযান চালানো হয়েছে। সকাল থেকে আবারও শুরু করেছি। কিন্তু আকাশের সন্ধান মেলানো যায়নি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
নিখোঁজ আকাশের প্রতিবেশী রুপালী খাতুন বলেন, তারা একভাই ও একবোন। আকাশ খুলনার হাবিব অপটিক্যালে চাকরি করত। রাতে দোকান ছুটি হওয়ার পর বাড়িতে যাওয়ার জন্য জেলখানা ঘাট থেকে ট্রলারে উঠে। কিন্তু পথিমধ্যে ফেরি-ট্রলার সংঘর্ষে সে নিখোঁজ হয়। তার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা। একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা পাগল প্রায়।
এদিকে ট্রলার মাঝিদের অনিয়মের কথা তুলে ধরে ঘাট এলাকার স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, নৌকা পারাপারে মাঝিরা কোন নিয়ম শৃঙ্খলা মানে না। ট্রলারে ২৫ যাত্রী উঠানামা করার কথা থাকলে সেখানে তারা ৩৫-৪০ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। বৃহস্পতিবার রাতে আবহাওয়া খারাপ ছিল। নদী বন্দরে সতর্ক সংকেত ছিল। অধিক যাত্রী নিয়ে চলাচলের জন্য এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। একটি ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষ সরব হয়। কয়েকদিন যাওয়ার পর আবার একই অবস্থা দাঁড়ায়। আমরা মাঝিদের একগুঁয়ে নীতি থেকে বের হতে চাই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রলারের এক মাহিলা যাত্রী বলেন, আমাদের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়। অনেক সময় মহিলারা বোরখা পরে ট্রলারে উঠতে গিয়ে নদীতে পড়ে যায়। ঘাটের অবস্থা খুবই নাজুক। তাছাড়া ট্রলারের মাঝিরা পারাপারে কোন নিয়ম নীতি মানে না। তাদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্য তিনি প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেন।
মোহাম্মাদ আলী একজন সরকারি চাকুরীজীবী। সেনেরবাজার এলাকার বাসিন্দা। ঘাটের চরম অব্যবস্থার কথা তুলে ধরে এ প্রতিবেদককে বলেন, মাঝিরা তাদের খেয়াল খুশি মতো যাত্রী নিয়ে চলাচল করে।
তিনি বলেন, সরকার যায় এবং আসে শুধু মানুষের পরিবর্তন হয় কিন্তু স্বভাবের পরিবর্তন হয় না।
খুলনা গেজেট/সাগর/এনএম