চেক ও স্ট্যাম্প চুরি করে নিজস্ব প্রতারক চক্রের মাধ্যমে মানুষকে প্রতারণার জালে ফাঁসিয়ে সর্বস্বান্ত করাই এই মুকুল গাইন চক্রের কাজ বলে ভুক্তভোগী তার লিখিত অভিযোগে ভাইস চ্যান্সেলর কুয়েট বরাবর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন। এমনটাই জানিয়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগে কর্মরত জুনিয়র ইন্সট্রুমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম।
মুকুল গাইন চক্র কর্তৃক প্রতারণার ভয়ানক থাবা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রফিকুল ইসলাম কুয়েট ভাইস-চ্যান্সেলর বরাবর গত ১৯/০৮/২০২৫ ইং তারিখে একটি লিখিত আবেদন করেন। যেখানে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রতারণার ফাঁদ থেকে তাকে মুক্ত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।
অভিযোগে রফিকুল জানান, তার স্ত্রী’র মৃত্যু জনিত ও পর পর ২ বার তিনি মিনি স্ট্রোক করায় মানসিক ও শরীরিকভাবে তিনি বিপর্যস্ত ছিলেন। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে প্রতারক চক্রের মূল হোতা কুয়েটের সহকারী ইলেকট্রিশিয়ান মুকুল গাইন তার অফিস কক্ষে রক্ষিত চেক বই ও স্ট্যাম্প চুরি করে এবং তা ব্যবহার করে জালিয়াতি চক্রের সহযোগিতায় তাকে উকিল নোটিশসহ ৪৫ লাখ টাকার চেক ডিজওনার মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। এবং ৩৫ লাখ টাকার একটি চেক যার নাম্বার SB-60068659446 তাদের জিম্মায় রেখে দেয়। যা অভিযুক্ত রফিকুল কোনো ভাবেই অবগত নয়। এবং সুপ্রভাত রায় নামক যে ব্যক্তি চেকটি ডিজওনার করিয়েছে তাকে রফিকুল চেনে না বা তার সাথে রফিকুলের কোনো প্রকার সম্পর্ক নাই বলে জানায়।
তিনি আরও বলেন, আমি যখনই জানতে পারি যে আমার চেক বই হারিয়ে গেছে তৎক্ষণাৎ আমি গত ১৬/১১/২৪ ইং তারিখে আড়ংঘাটা থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করি যাহার নাম্বার-৬৬১ এবং ২৫/১১/২৪ ইং তারিখে উক্ত সাধারণ ডায়েরির কপি জনতা ব্যাংক, কুয়েট শাখায় জমা দিয়ে হারিয়ে যাওয়া চেকগুলোর পেমেন্ট স্টপ করাই। তারপরেও ব্যাংক আমাকে অবগত না করে উক্ত চেক বহনকারী সুপ্রভাত রায় ও শাহাবুদ্দিন গাজীর চেকগুলো কীভাবে ডিজওনার করলো সেটা আমার বোধগম্য নয়।
জনতা ব্যাংক, কুয়েট কর্পোরেট শাখার শাখা ইনচার্জ মোঃ আঃ হামিদ শেখ এর সাথে দেখা করে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ চেক নিয়ে আসলে যদি সেটা কোনো ত্রুটিজনিত কারণে পেমেন্ট করা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে আমরা চেকটিকে ডিজওনার করে দিতে পারি। তবে কি কারণে চেকটি ডিজওনার করা হয়েছে আমরা সেটা উল্লেখ করে দেই। যেমন আপনাদের অভিযুক্তের চেকটি ডিজওনার করার কারণ হিসেবে আমরা অপর্যাপ্ত তহবিল ও স্বাক্ষরে অমিল উল্লেখ করে দিয়েছি। তবে চেকগুলি চুরি হয়েছে মর্মে জিডি ও স্টপ পেমেন্ট করার পরেও কীভাবে তারা চেকটা ডিজওনার করলো এই বিষয়ে তিনি কোনো উপযুক্ত কারণ ব্যক্ত করতে ব্যর্থ হন। যেখানে তার উচিত ছিল প্রশাসনকে অবহিত করা বলে জানান রফিকুল ইসলাম।
অভিযুক্তের দেওয়া তথ্যাদি অনুসন্ধানে জানা যায়, ইকরামুল হোসেন ঢালী SB-60068659446 চেকের বিপরীতে ০৩/১১/২০২৪ ইং তারিখে ২০ লাখ টাকার উকিল নোটিশ প্রেরণ করে। কিন্তু এই একই চেক ২৩/০২/২০২৫ ইং তারিখে জনতা ব্যাংক কুয়েট শাখা থেকে ডিজঅনার করান জনৈক শাহাবুদ্দীন গাজী। সুপ্রভাত রায় SB-60068659449 চেকের বিপরীতে ২৫ লাখ টাকার মামলা এবং শাহাবুদ্দীন গাজী SB-60068659446 ও SB-60068659447 দুইটি চেক ডিজওনার করলেও SB-60068659447 চেকের বিপরীতে ২০ লাখ টাকার মামলা দায়ের করে। উকিল নোটিশ পাঠাচ্ছে ইকরামুল হোসেন ঢালী নামক একজন ব্যক্তি এবং উকিল নোটিশে প্রদত্ত ইকরামুলের ফোন নাম্বার ০১৯১১৮৯১৮০১ যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে ইকরামুল নয় আনিস বলে উল্লেখ করেন। অর্থাৎ নাম একজনের আর নাম্বার আরেকজনের। মামলার ক্ষেত্রে উকিল নোটিশ না পাঠিয়ে সুপ্রভাত রায় ও শাহাবুদ্দিন গাজী আলাদা ভাবে দুইটি মামলা করলেও উকিল নোটিশ পাঠানো ইকরামুল ঢালী কোনো মামলা করেনি বলে জানা যায়। মুকুল গাইনসহ এই চার জনেরই স্থায়ী বাড়ি খুলনা জেলার দাকোপে অর্থাৎ তারা সকলেই একই এলাকার বাসিন্দা।
দাকোপে বসবাসরত বিশিষ্ট সমাজসেবক জি এম রফিকুল হাসান নামক এক ব্যক্তি জানান, আমি আনিস এর সাথে এই বিষয়ে কথা বলেছি, সে বলেছে ভাই আমরা এই বিষয়ে কিছু জানি না। মুকুল গাইন আমাদেরকে এই চেকগুলা দিয়েছে। শাহাবুদ্দীন গাজী ও সুপ্রভাত রায়কে জিজ্ঞাসা করলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।
আনিসের ব্যবহৃত ০১৯১১৮৯১৮০১ নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি আরও জানান, মুকুল গাইনের সাথে রফিকুল ইসলামের কোন শত্রুতা থেকে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।
ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, কুয়েট সাবস্টেশনে দায়িত্ব পালনকালে মুকুল গাইন আমার অধীনে কর্মরত ছিল এবং দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার জন্য কর্তৃপক্ষকে আমি অবহিত করি এবং তদন্ত সাপেক্ষে কর্তৃপক্ষ তার বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করে দেয়। তারই প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে মুকুল গাইন আমাকে এই ভাবে সর্বস্বান্ত করার অপচেষ্টা করছে। সর্বোপরি আমি সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে মুকুল গাইনসহ তার চক্রের হাত থেকে রক্ষা ও এই চক্রের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করি।
এ ব্যাপারে মুকুল গাইনের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা জানার জন্য তার নাম্বার ০১৯৭৪৯৬৮০০০ তে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করে নাই।
খুলনা গেজেট/এনএম