সুন্দরবন কেন্দ্রিক দায়িত্ব পালনকালে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণ এবং ব্যক্তিগত মানহানির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে অবসরপ্রাপ্ত ফরেস্টার তানজিলুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য গোলাম কিবরিয়া।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) কয়রা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
গোলাম কিবরিয়ার দাবি, তানজিলুর রহমান দীর্ঘদিন সুন্দরবনের বিভিন্ন ফরেস্ট স্টেশন ও টহল ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালনকালে বিষ দিয়ে মাছ ধরা, হরিণ শিকারিদের সহায়তা, অবৈধ প্রবেশে সহযোগিতা, ঘুষ গ্রহণ এবং যারা এসবের প্রতিবাদ করতেন তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বন মামলা দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, গত বছর স্থানীয় পাঁচজন জেলের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র (বিএলসি) দেওয়ার বিনিময়ে তৎকালীন নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশনের দায়িত্বে থাকা তানজিলুর রহমান ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে জেলেরা ধারদেনা করে সেই টাকা দিলেও অনুমতিপত্র দেয়নি তানজিলুর। পরে ইউপি সদস্য হিসেবে তিনি জানতে পেরে তানজিলুর রহমানের কাছে গরিব জেলেদের টাকা ফেরত চাইলে ১০ হাজার টাকা ফেরত দেন। বাকি টাকা ফেরত চাওয়ার পর থেকে তানজিলুর রহমান তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন কিবরিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে ইউপি সদস্য কিবরিয়া বলেন, অপপ্রচারের একটি কল রেকর্ড তার হাতে এসেছে, যেখানে এক বন মামলার আসামিকে তানজিলুর রহমান বলছেন -বেশির ভাগ মামলার আসামির নাম তিনি কিবরিয়া মেম্বারের কাছ থেকে পেয়েছেন। সেই কথোপকথনে আরও শোনা যায়, মামলায় মুক্তি পেতে হলে তার বিরুদ্ধে কোনো কথা না বলে কিবরিয়া মেম্বারের বিরুদ্ধে বলার শর্ত দেন তিনি। ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি বলেন, আমি কখনো সুন্দরবনে প্রবেশ করেননি, বরং অপরাধের খবর বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিয়েছি। তবুও আমার নামেই মামলা দেওয়া হয়েছে। তখন তানজিলুর রহমান বলেন, ‘মামলা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আমার সঙ্গে ঝামেলা কোরো না, কয়রা আদালতে গিয়ে তোমাদের পক্ষে বলে আসব।’
সংবাদ সম্মেলনে ইউপি সদস্য দাবি করেন, তানজিলুর রহমান চাকরি জীবনে ঘুষ ও বনজীবীদের শোষণের মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন, যার প্রমাণ হিসেবে চাপাইনবাবগঞ্জে তার বহুতল ভবন ও বিলাসী জীবনযাপন উল্লেখ করেন তিনি। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানান কিবরিয়া।
গোলাম কিবরিয়া জানান, তিনি কখনো মিথ্যা মামলায় কাউকে জড়াননি; বরং সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করেছেন। তবে ফরেস্টার তানজিলুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে মানহানি করছেন। তিনি সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ফরেস্টারের দায়ের করা মামলাগুলো নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে নির্দোষ বনজীবীদের মুক্তি ও তাঁর অবৈধ সম্পদের উৎস অনুসন্ধানে দুদকের সক্রিয় ভূমিকা চান।
এ বিষয়ে জানতে তানজিলুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
খুলনা গেজেট/এসএস