Edit Content
খুলনা, বাংলাদেশ
বৃহস্পতিবার । ৭ই আগস্ট, ২০২৫ । ২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content

৫ আগস্ট ২০২৪: হাসিনার দেশত্যাগের খবরে খুলনার রাজপথে বিজয়োল্লাস (ভিডিও)

মোহাম্মদ মিলন

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, দিনটি ছিল সোমবার। এদিন সকাল থেকে খুলনা মহানগরীর শিববাড়ি মোড়ে জড়ো হতে থাকে ছাত্র-জনতা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে নামে ছাত্র-জনতার ঢল। দুপুর আড়াইটা নাগাদ আন্দোলনরত অবস্থায় শিক্ষার্থীরা খবর পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন। এরপরই বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়েন শিববাড়ি এলাকায় থাকা হাজার হাজার মানুষ। খুলনার সড়কে নেমে আসে ছাত্র-জনতা। মায়েরা সন্তানকে কোলে নিয়ে, অনেক বাবা সন্তানকে কাঁধে নিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে খুলনার সড়কে নেমে আসেন। সবশ্রেণি-পেশার মানুষের পদচারণায় খুলনার রাজপথ সরগরম হয়ে ওঠে। পথে পথে বিতরণ করেন মিষ্টি। এ সময় নগরীর বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ পায়ে হেঁটে, সাইকেল, ভ্যান, রিক্সা, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে শিববাড়ীর দিকে ছুটতে থাকেন। মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো খুলনা। অনেকেই বলেন দেশ আবার নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। এ এক নতুন স্বাধীনতা, নতুন বাংলাদেশ।

সেদিন শিক্ষার্থীরা বলেছিলেন, ভাষা আন্দোলন দেখিনি, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। তবে আজ ২০২৪ দেখলাম। ছাত্র-জনতার বিজয় হয়েছে। মানুষের এই উল্লাস দেখার মতো। আরেকটি স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করেছি।

তারা বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের উল্লাস দেখিনি, তবে ২০২৪ এর আজকের বিজয় দেখে মনে হচ্ছে দেশ আবার নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। মানুষের মধ্যে তেমনই আনন্দ উল্লাস বিরাজ করছে।

৫ আগস্টের স্মৃতি তুলে ধরে আন্দোলনের নেতারা যা বলছেন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা মহানগরের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও খুবির সাবেক ছাত্র সমন্বয়ক নাঈম মল্লিক বলেন, খুলনায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড যারা পরিচালনা করতো তারা ৪ আগস্টই বিতাড়িত হয়। ৫ আগস্ট সকাল থেকে আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছিলাম শিববাড়ি মোড়ে। সেখানেই শুনেছিলাম সেনাপ্রধান ভাষণ দিবেন। সবাই অপেক্ষার প্রহর গুণছিলাম। তারপরই হঠাৎ করে বিকালে খবর আসে যে ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ’ করেছেন। তারপরই আমরা বিজয় মিছিল নিয়ে হাদিস পার্কে শহীদ মিনারে যাই। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শিববাড়ি ফিরে আসি। এদিন কিছু স্থানে বিশৃঙ্খলা হয়েছিল। এরপর খুবি ক্যাম্পাসে গিয়ে আমরা ওই দিন টিম ভাগ করে খুলনাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন জায়গায় টহল দেই।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে আমরা দেখেছি মানুষ নাচ-গান করেছে, মিষ্টি বিতরণ, মিছিল, স্লোগান দিয়েছে, সন্তানদের নিয়ে বাবা-মা সড়কে নেমেছে ইতিহাসের সাক্ষী হতে। অনেকেই খাবার বিতরণ করেছে। এর কারণ উল্লেখ করে জুলাইযোদ্ধা নাঈম মল্লিক বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এটি শুধু বৈষম্য বা কোটা কেন্দ্রী ছিল না, অনেকে দলীয় কারণে বৈষম্যের শিকার, অনেকে মতাদর্শের কারণে, অনেকে ভোট দিতে পারেনি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে পারতো না। এই ধরনের মিশ্রিত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখেছি ৫ আগস্ট। সবাই উল্লাস করেছে। সবাই মনে করেছে আমরা একটা ফ্যাসিস্ট শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছি। এটি নতুন স্বাধীনতার স্বাদ। ১৬ ডিসেম্বরের অতীতের যে ছবিগুলো দেখা যায়, সেই রকমেরই একটা অবস্থা ছিল। মনে হচ্ছিল সবাই মুক্ত বাতাসে স্বাদ নিতে বেড়িয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, ৪ আগস্ট থেকেই মানুষকে আর ঘরে রাখা যায়নি। ৫ আগস্ট যখন খবর আসলো হাসিনা দেশত্যাগ করেছে, তখন সবচেয়ে আনন্দের মুহুর্ত ছিল বাড়ির মহিলারা ছোট ছোট শিশু বাচ্চাদের কোলে নিয়ে রাজপথে নেমেছিল। তারাও আনন্দ উদযাপন করেছে। তাদের দেখে ঈদের থেকেও বেশি খুশি মনে হয়েছে।

তিনি বলেন, হাসিনা পতনের সারথি, হাসিনা পতনের একজন সৈনিক হিসেবে আমরা নিঃসন্দেহে নিজেদেরকে গর্বিত মনে করেছি। রাজপথে দেখেছি বাড়ির সকলে রাস্তায় নেমে এসে উল্লাস করেছে।

তিনি আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনে আমাদের ২ হাজার মানুষ জীবন দিয়েছে। শত শত শিশুরা জীবন দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ তাদের চোখ হারিয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেছে। ১৯৭১ সালে আমাদের ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছিল, কয়েক লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছিল। কিন্তু ৭১ সালে সেই কাঙ্খিত বাংলাদেশ কিন্তু আমরা ৫৪ বছরেও বিনির্মাণ করতে পারিনি। আজ আমাদের একটাই চাওয়া এই ২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানে হাজার হাজার মানুষের ত্যাগ যেন বৃথা না যায়। মানুষের যে চাওয়া নতুন বাংলাদেশ, এই দেশে আর যেন কখনো কোন ফ্যাসিবাদের জন্ম না হয়। নতুন বাংলাদেশের যে চাওয়া সেটি আমরা বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন