আল আমিন (৪২) ‘র বিরুদ্ধে থানায় হত্যাসহ পাঁচটি মামলা ছিল। তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় দৌলতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পিতা-মাতা স্ত্রীবিহীন আল আমিনের বাড়িতে বড় বোন নীহারুন বেগমের আহাজারি যেন কিছুতেই থামছে না। ‘আরে আমার ভাই, আল্লাহ, ভাইডারে যখন গলাডা কাটছে, আমার ভাইডার পরানডা কি কইছে’ এ কথা বলে বার বার বিলাপ করছিলেন নিহতের বড় বোন নীহারুন বেগম।
এদিকে সোমবার (৪ আগস্ট) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে বাদ আছর মহেশ্বরপাশা দারুল ইসলাম জামে মসজিদে জানাজা শেষে মহেশ্বরপাশা সরকারি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আওলাদ হোসেন হাওলাদার বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ৩, তাং ৪/৮/২০২৫। আসামী অজ্ঞাতনামা।
মহেশ্বরপাশা পূর্ব দিঘীরপাড় এলাকায় ছোট্ট একটি টিনের ঘরে বড় ভাই আওলাদের সঙ্গে বসবাস করত আল আমিন। সেখানে গিয়ে দেখা যায় একমাত্র বোন নীহারুন বেগমের আহাজারি। ছোট ভাইয়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিলাপ করে তিনি বলতে থাকেন, আমারে দেখছে আমার ভাই, মায়ের মত। কইছে বু আপনি কোন কষ্ট করবেন না, আমারে কইবেন, আপনার যেহানে যা লাগবে, আমারে কইবেন। কি কমু, আমার ছোট ভাই.. দীর্ঘশ্বাস দিয়ে বিলাপ করে বলেন, ‘ওরে আমার ভাই…চলে গেলি, আল্লাহ ঘাতকদের বিচার করো’।
এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, অধিকাংশ সময় নিহত আল আমিন সময় কাটাতো বাদামতলা তার লিজ নেওয়া ঘেরে। দুই তিন দিন পর বাড়িতে আসতো। তখন বড় ভাইয়ের সংসারের খাওয়া-দাওয়া করত। তার পিতা শাহেদ আলী মারা যান ১৯৯০ সালে। মা মারা গেছে এক যুগ হলো। ২০১৬ সালে স্ত্রী ময়না বেগম তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। এরপর সে আর বিয়ে করে নাই। একমাত্র কন্যা আখি (২২) বিবাহিত। স্বামীর সঙ্গে বসবাস করেন পাইকগাছার কপিলমুনিতে। তার এক বন্ধু হত্যা মামলায় জেলও খেটেছে কিছুদিন। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর যুবদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়।
নিহতের বড় ভাই আওলাদ হোসেন হাওলাদার খুলনা গেজেটকে বলেন, আমার জানামতে ছোট ভাইয়ের বাদামতলায় ঘের আছে। ৭/৮ মাস পূর্বে মীরেরডাঙ্গা সোনালী জুট মিলের পার্শ্ববর্তী বাদামতলা এলাকায় জনৈক্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি ঘের লিজ নিয়ে সেখানে মাছ ছাড়ে। অধিকাংশ সময় সে ঘেরেই থাকতো। কিভাবে কি ঘটনা ঘটেছে সুনির্দিষ্ট ভাবে সঠিক কিছুই জানিনা। তবে আগে তার বিরুদ্ধে টুকিটাকি অভিযোগ থাকতো, তবে আগের থেকে সে ভালো পথে চলতো। ঘের লিজ নেওয়ার পূর্বে সে সিএনজি চালাত। অধিকাংশ সময় ঘেরে থাকত। ২/৩ দিন পর মাঝে মাঝে দুপুরে এসে একটু খাওয়া দাওয়া করে চলে যেত। দুই তিন দিন পর না দেখলে, আমি তাকে ফোন দিতাম। কিছুদিন হলো কিস্তিতে পুরানো একটি মোটরসাইকেল কিনেছে। ঘটনার দিন রাত ৯ টার দিকে একজন মোবাইল ফোনে দেখাচ্ছে এটা তোমার ভাই না। মোবাইলে ঘটনা দেখে আমি কয়েকজনকে সাথে নিয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে দেখি প্রশাসনের লোকজন। দেখে আমি চিনতে পারি আমার ভাই’।
দৌলতপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মীর আতাহার আলী বলেন, ‘নিহত আল আমিনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা, দুইটি ডাকাতির প্রস্তুতি মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে। হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে আমাদের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে’।
উল্লেখ্য, রবিবার (৩ আগস্ট) রাত আনুমানিক ৯ টার দিকে দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার পল্লবের বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার উপর দুর্বৃত্তরা জবাই করে হত্যা করে আল আমিনকে। নৃশংস এই হত্যাকান্ডটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল সৃষ্টি করে। এর আগে গত ১১ জুলাই জুম্মার দিন দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্য দিবালোকে নিজ বাড়ির সামনে গুলি এবং পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করে বহিষ্কৃত যুবদলনেতা মাহবুবুর রহমানকে। নৃশংস এ দুটি হত্যাকান্ডের পর থেকে ওই এলাকার মানুষ ভয় এবং আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
খুলনা গেজেট/লিপু/এসএস