Edit Content
খুলনা, বাংলাদেশ
বুধবার । ৬ই আগস্ট, ২০২৫ । ২২শে শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content
জনভোগান্তি চরমে

রূপসায় দেড় কোটি টাকার রাস্তা হস্তান্তরের আগেই ভেঙেছে ৩৫০ ফুট

রূপসা প্রতিনিধি

খুলনার রূপসায় সড়ক নির্মাণ শেষ! দেড় কোটি টাকা ব্যয় নির্মিত সড়কটি হস্তান্তরের আগেই ভেঙে পড়েছে সাড়ে ৩ শত ফুট। নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করায় মাত্র ৫ দিনের মধ্যেই ১০ ফুট চওড়া রাস্তার দুই তৃতীয়াংশ ভেঙ্গে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারদের দাবি বৃষ্টির কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে রাস্তাটির।

উপজেলা এলজিইডি তথ্য সূত্রে জানা যায়, রূপসার ঘাটভোগ ইউনিয়নে বামনডাঙ্গা বাজার পুলিশ ক্যাম্প ও চাঁদপুর দাখিল মাদ্রাসা পর্যন্ত পুরাতন সড়কটিতে নতুনভাবে কাজ করা হয়েছে ১৪৮৫ মিটার। এলজিইডির তত্ত্বাবধানে প্রশস্ত ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে ১ কোটি ৫২ লাখ ২৮ হাজার ১১৫ টাকা ব্যয় ধরা সড়ক নির্মাণের টেন্ডার পান মেসার্স জারা ট্রেড এন্টারন্যাশনাল-ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মো. জিলুর রহমান। পরে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে সাব কন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজটি বাস্তবায়ন করেন এসএম সালাউদ্দিন ও ওবাইদুল। অথচ কাজ শেষ হতে না হতেই সড়কটির প্রায় সাড়ে ৩ শত ফুট ভেঙ্গে যায়।

সরেজমিনে জানা যায়, সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয় জুলাই মাসের প্রথম দিকে। কাজ চলমান অবস্থায় ফাটল এবং ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই সড়কটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়। ফাটল দেখে স্থানীয় লোকজন কাজে বাধা দিলে, তা মান্য না করে দায়সারা ভাবে কাজ শেষ করা হয়।

ওই এলাকার আরও একজন বাসিন্দা মো. নান্নু মিনা বলেন, দায়সারা কাজ করার ফলে বৃষ্টির পানিতে ভেঙে গেছে। সড়ক নির্মাণ কাজ সঠিক নিয়মে করলে এ ধরণের ভোগান্তি সৃষ্টি হতো না। পুরো সড়ক জুড়ে বেশ কয়েকটি স্থানে সোল্ডারের ভাঙন দেখা দিয়েছে। গ্রামবাসীরা অনেকবার বলে কয়ে এ রাস্তাটি পেয়েছি। কাজটি শুরু করলে ভেবেছিলাম গ্রাম থেকে এখন শান্তিমত রোগীবহন এ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে পারবে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরাও চলাচলে সুবিধা পাবে। তা সম্পূর্ণ উল্টে পূর্বের অবস্থা থেকে আরও খারাপ হয়েছে।

পুকুর পাড় ভাঙার ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা তালুকদার বাদশা মিঞা বলেন, দুইপাশে পুকুর মাঝ দিয়ে সড়কের ২০ ফুটের মত ভেঙে চলে গেছে। শুধুমাত্র ‘গাইড ওয়াল’ সঠিক নিয়মে না থাকায় বৃষ্টির পানির চাপ সহ্য করতে পারেনি। এখানে গাইড ওয়াল আরও উচু করে দিলে এ ক্ষতির মুখে পড়তে হত না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, এলাকাবাসীর একমাত্র পথ দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে দীর্ঘদিন পর সংস্কার করা হলো। কিন্তু বৃষ্টির সময় কাজ করার কারণে কাজ চলমান অবস্থায় রাস্তায় ফাটল ধরে, পরে তা ভেঙে যায়। রাস্তাটির গোড়া থেকে মাটি কেটে নিয়ে পায়েলিং এর ভিতর দেওয়ার ফলে ফাটল ধরা জায়গা থেকে দ্রুত ভেঙে যায়। গাইড ওয়াল তুলানামূলক ছোট/নিচু দেওয়ার ফলে এমনটি ঘটেছে। অপরিকল্পিত কাজে সরকারের যেমন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তদরুপ সাধারণ মানুষ ও যান চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন কাজের তদারকিতে খুব একটা আসেনি। ঠিকাদাররা দায়সারা ভাবে কাজ করে চলে গেছে। সড়কটির কাজ যখন শুরু হয় তখনই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হয়েছে। এ কারণেই এত অল্প সময়ের মধ্যেই রাস্তাটি ভেঙে গেছে।

মূল ঠিকাদার মো. জিলুর রহমানকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি। পরে সাব কন্ট্রাক্টার এসএম সালাউদ্দিন বলেন, সড়কের কাজ পরিপূর্ণ শেষ করে ছিলাম। কিন্তু বৃষ্টির কারণে অল্প দিনে ভেঙ্গে যায়, তবে কর্তৃপক্ষ আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, কর্মকর্তারা এসি রুমে বসে অপরিকল্পিত এস্টিমেট করেন যেখানে গাইড ওয়ালের খুটি লাগবে ১০ মিটার সেখানে এস্টিমেটে দেন ৩ মিটার। একটা খাল পাড়ে ৩ মিটার খুঁটি দিয়ে কি হবে। তারপরও কর্মকর্তারা মনে করেন ফিল্ডের লোকেরা টাকা মেরে খাবে।

রূপসা উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী শোভন সরকার বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে দ্রুত কাজটা সংশোধনের পত্র প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ১ বছর পর্যন্ত চুক্তির দায়বদ্ধতা এবং ঠিকাদারের এখনো চূড়ান্ত বিল পাওনা রয়েছে। তারা বৃষ্টির কারণে কাজ করতে পারছেন না, বৃষ্টি কমলেই সড়কের পূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু করবেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা রিকতা বলেন, বামনডাঙ্গায় রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়েছি। উপজেলা প্রকৌশলীকে পর্যবেক্ষণ করে, পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি এবং আমরাও মনিটরিং করছি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন