Edit Content
খুলনা, বাংলাদেশ
বৃহস্পতিবার । ২১শে আগস্ট, ২০২৫ । ৬ই ভাদ্র, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content

নিষিদ্ধ রিং জালের দাপটে তেরখাদায় দেশীয় মাছের অস্তিত্ব হুমকিতে

তেরখাদা প্রতিনিধি

তেরখাদা উপজেলার চিত্রা নদী, ভূতিয়ার বিল, বিল বাসুয়াখালীসহ অসংখ্য খাল-বিলজুড়ে নিষিদ্ধ রিং জালের অবাধ ব্যবহার দেশীয় মাছের টিকে থাকার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরদারির অভাবে দিন দিন বাড়ছে এসব ক্ষতিকর জালের ব্যবহার, যার ফলে বিল-ঝিল ও খালবিলের মৎস্য সম্পদ আজ হুমকির মুখে।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এসব রিং জাল মূলত এমনভাবে তৈরি যে, এতে পোনামাছ, ডিমওয়ালা মা মাছ, এমনকি সদ্য জন্ম নেওয়া মাছও আটকা পড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন শোল, টাকি, বেলে, ট্যাংরা, কৈসহ ছোট বোয়াল মাছের পোনাসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ এভাবে নিধন হচ্ছে। ফলে বাজারে দেশীয় মাছের সরবরাহ কমে গেছে এবং বাড়ছে দাম। পাশাপাশি মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন চক্রে নেমে এসেছে ধস।

কাটেঙ্গা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ শেখ অভিযোগ করে বলেন, আজকেই দেখলাম একজন জেলে ১০-১২টি রিং জাল পানিতে ফেলেছে, যার প্রতিটি জালের দৈর্ঘ্য ৩০ থেকে ৬০ মিটার। এরকম শত শত জেলে খাল-বিলে অবাধে জাল ফেলছে, অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

স্থানীয় সোহেল শেখ বলেন,তোফায়েল আহমেদ ও জুয়েল মোল্লা বলেন, “রিং জালের কারণে দেশীয় মাছ ধ্বংস হচ্ছে। অবিলম্বে রিং জাল নিষিদ্ধ করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুধু নিষেধাজ্ঞা দিলে হবে না, মাঠ পর্যায়ে কার্যকর নজরদারি ও অভিযান দরকার।

স্থানীয়রা বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরেছেন:

প্রতিটি গ্রামে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মাইকিং করে রিং জাল নিষিদ্ধ ঘোষণা,
শুক্রবার জুমার দিনে মসজিদে ইমামদের মাধ্যমে সচেতনতামূলক বয়ান,
জালের দোকানে রিং জাল বিক্রি বন্ধে নিয়মিত অভিযান,
খাল-বিল এলাকায় নিয়মিত টহল দিয়ে জাল জব্দ ও জরিমানার ব্যবস্থা এবং
রিং জাল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে আইন পাশ।

এছাড়া তারা অভিযোগ করেন, তেরখাদার বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী মহল খাল-বিল দখল করে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। খাল-বিল গ্রামের সাধারণ মানুষের আহারের উৎস, সেখানে ব্যবসার নামে দখল কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না বলে মনে করেন তারা।

উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক চৌধুরী ফখরুল ইসলাম বুলু বলেন, প্রতি বছর পোনামাছ নিধনের ফলে দেশীয় মাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু বইয়ে দেশীয় মাছের ছবি দেখবে, খেতে পারবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেরখাদা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। তবে যেটা আপনি বলেছেন, সেটি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। মাঠ পর্যায়ে অভিযান বা নজরদারির দৃশ্য তেমন একটা দেখা যায় না। ফলে সচেতন নাগরিকরা আশঙ্কা করছেন, এইভাবে চলতে থাকলে খুব শিগগিরই দেশীয় মাছ একেবারে বিলুপ্ত হয়ে পড়বে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন