Edit Content
খুলনা বাংলাদেশ
বুধবার । ২৩শে জুলাই, ২০২৫ । ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content
কোরবানীর ঈদ আসন্ন

তবুও ব্যস্ততা নেই কামারশালায়!

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘প্রতি কোরবানী ঈদের অন্তত একমাস আগে ছুরি-চাপাতি বানানোর অর্ডার নেয়া শুরু করি। ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা শুধু ঈদ উপলক্ষেই বিক্রি করেছি। এবার ঈদের বাকি মাত্র ৯দিন, তবুও ক্রেতা নেই।’ খুলনা মহানগরীর বৈকালী বাজারের মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বৃষ্টিভেজা দুপুরে এমনি আক্ষেপ প্রকাশ করলেন। করোনা কারণে ভাড়া-স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সংসারের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতেই হিমশিম খাচ্ছেন এ কর্মকার। দিনের বেশিরভাগ সময় কাটছে, কর্মহীন। তাই কোরবানীর ঈদ আসন্ন, কিন্তু নাজমুল ইসলামের মতো কর্মকারদের মন বিষন্নতায় ভরা।
তার নিভুনিভু আশা, ‘এবার কোরবানীতে সবমিলিয়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মত বেচা বিক্রি করতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে।’

প্রতিবছর ঈদুল আযহার দু/তিন সপ্তাহ আগে থেকেই দম ফেলার ফুরসর থাকতো না কামারদের; কামারশালাগুলোতে দিন-রাত চলতো কাজ। চাপড়, দা, বটি-ছুরি তৈরি, বিক্রি ও শাণ দিতে দিতেই দিনরাত একাকার হয়ে যেতো তাদের। তবে এবার বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে উল্টে দিয়েছে চিরায়ত অবস্থা।

নগরীর খুলনা থানা মোড়, শেখপাড়া, খালিশপুর, দৌলতপুর ও ফুলবাড়ীগেটসহ বিভিন্ন এলাকার কর্মকারদের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো ব্যস্ততা নেই কামারদের। দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকার পর এখন যা আয় হচ্ছে-তাতে সংসার পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে তারা। উপজেলাগুলোতেও তারা অনেকটা অলস সময় পার করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

নগরীর দোলখোলা রোডের সুদীপ কুমার কর্মকার বলেন, ঈদের দু/তিন সপ্তাহ আগে থেকেই দা, ছুরি, বটি, চাপড়, ঢেউ (বড় ছুরি) তৈরি করতাম। ভালো জিনিস পেতে অর্ডার দিতে হতো আরও একমাস আগে। দারুল উলূম মাদ্রাসা, খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা, মারকাযুল উলূম মাদরাসা, আহমাদিয়া মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকদের ঢকসই ছুরি তৈরির অর্ডার আসতো এক/দেড় মাস আগে থেকেই। আর আগে বানিয়ে রাখা মালগুলো বিক্রি শুরু হতো কোরবানীর দুই সপ্তাহ আগে থেকে। কিন্তু এবছর তেমন কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পুরোনো ছুরি, বটি, চাপড় শাণ দিয়ে রাখছি বিক্রি করবো।

নতুন বাজারের কামার বাসুদেব মন্ডল বলেন, দোকানে তেমন একটা কাজ নেই। মেলাদিন (দীর্ঘদিন) কর্মহীন ছিলাম, ঘর ভাড়া টাকাই দিতে পারতেছি না। দোকান বন্ধের সময় ধার-কর্জ করে সংসার চালিয়েছি; কোরবানীর ঈদের সময় বাড়তি ইনকামের আশায়। করোনার কারণে কাজ কমে গেছে। এখন চিন্তায় আছি, কিভাবে এ টাকা দেবো?

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, কামারশালাগুলোতে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে দা, ছুরি, বটি। মানভেদে নতুন দা ২০০ থেকে ৪০০টাকা, ছুরি ১২০ থেকে ২৫০ টাকা, বটি ৩৫০ থেকে ৬০০টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ২৫০ থেকে ৫০০টাকা এবং চাপড় ৩৫০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দা শাণ করাতে ২০টাকা, ছুরি ১৫ টাকা, বটি ৩০টাকা করে নিচ্ছেন কামাররা।

খুলনা থানা মোড়ের একাধিক কামারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক খরচ দিয়ে তাদের লোকসান থাকে সারাবছর। লোকসান কাটিয়ে উঠতে কোরবানির ঈদের অপেক্ষায় থাকতেন তারা। কোরবানির আগের মাস থেকেই তাদের ব্যবসা চাঙা হতো। কিন্তু এবছর সেই আশার গুঁড়েবালি।
এসব কামারের অধিকাংশই পূর্বপুরুষদের হাত ধরে এই পেশায় এসেছেন। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের দাপটে কামার শিল্পে চলছে দু’র্দিন। এরমধ্যে করোনা মহামারী; ফলে গভীর সংকটে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়েছে কর্মকারদের কপালেও।

নগরীর বড় বাজারের ডেল্টাঘাট এলাকা পাইকারী বিক্রেতা সুকুমার মন্ডল বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারী ক্রেতাদের অর্ডার নিয়ে সময়মতো ডেলিভারি দিতে পারতাম না বলে প্রায়ই তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি হতো। কিন্তু এবার সম্পুর্ণ বিপরীত। ক্রেতাদের উল্টো ফোন করে খোঁজ-খবর নিচ্ছি, মোকামে আসবে কি না সে শুনতেছি। কেনাবেচা একদম নেই বললেও চলে।

খুলনা গেজেট/এআইএন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন