ইস্টার্ণগেটে গুলিবিদ্ধ আফসারকে ঢাকায় প্রেরণ

জাকারিয়াদের বাড়ীতে গুপ্তস্থান ঘিরে কৌতূহল

নিজস্ব প্রতিবেদক ও ফুলবাড়ীগেট প্রতিনিধি

নগরীর খানজাহান আলী থানার ইস্টার্ণগেট মশিয়ালী গ্রামে মিল শ্রমিক নজরুল, কলেজ ছাত্র সাইফুল ও দিনমজুর রসুল হত্যাকান্ডের মূল হোতাদের বাড়ীতে রহস্যজনক গুপ্তস্থানের সন্ধান পেয়েছে এলাকাবাসী। আন্ডারগ্রাউন্ডে এমন গুপ্তস্থানকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে নানা কৌতুহল। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধরা ভাংচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয় ঘাতকদের আলিশান ভবনে। যা দেখতে বিভিন্ন অঞ্চলের উৎসুকজনতা এখন ভীড় করছে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ৩দিনেও উদ্ধার হয়নি। এদিকে, গুলিবিদ্ধ আফসারের অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। আর গণপিটুনিতে নিহত জেহাদের মরদেহ রবিরার মাগরিবের পর দাফন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মশিয়ালী গ্রামের তিন সহোদর জাকারিয়া-জাফরিন ও মিল্টন বাহিনীর গুলিতে জুটমিলের শ্রমিক নজরুল ইসলাম, দিনমুজুর তিন শিশু সন্তানের জনক গোলাম রসুল এবং আটরা মেট্রো টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্র সাইফুল ইসলাম নিহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী অভিযুক্তদের বিলাশবহুল বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া মিল্টনের বাড়ীর নিজতলার টয়লেটের পাশের একটি কক্ষের ওয়ালে বিশেষভাবে তৈরী গুপ্তস্থানের সন্ধান পেয়েছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসী বলছে, ওয়ালের মধ্যে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে তৈরী এই গুপ্তস্থান, যা নজরে আসার মতো নয়। সেখানেই কি তাহলে অস্ত্র রাখা হতো? এছাড়া মিল্টনের বাড়ীর প্রধান ফটকের সামনেই একটি আধাপাকা পুরাতন কক্ষের মাটির নিচে (আন্ডারগ্রাউন্ড) বড় ড্রাম পুতে তৈরী করা রাখার গুপ্তস্থানের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব অস্বাভাবিক গুপ্তস্থানগুলো ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল।

ওই গ্রামের মোবারকের ছেলে ওলিয়ার ও সবুরের ছেলে জাহাঙ্গীর বলেন, অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী মিল্টনের বাড়ীর গোপন একটি কক্ষের ওয়ালে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা স্থানের সন্ধান পাওয়া গেছে। যেখানে যদি অস্ত্র রাখে, তাহলে খুঁজে বের করা অসম্ভব। হত্যাকান্ডের পর এলাকাবাসী ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে জ¦ালিয়ে দিলে আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর এই গুপ্তস্থানের সন্ধান পাওয়া যায়। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত ট্রিপল হত্যাকান্ডের মূল আসামী শেখ জাকারিয়া ও মিল্টনকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। শুলি বর্ষণের ঘটনায় ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই লুৎফুল হায়দার বলেন, অন্যতম আসামী ও মূল অভিযুক্তদের সহোদর জাফরীনকে রিমান্ডে নিয়ে অবৈধ অস্ত্র ও তার ভাইদের অবস্থান সম্পর্কেই প্রথম প্রশ্ন করা হবে। খুব দ্রুতই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী তিনি।

এদিকে, ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ জখম আফসারের অবস্থা অবনতি হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া হয়েছে। আফসারের ছেলে বাবু জানিয়েছেন, তার পিতার অবস্থা অবনতি হয়েছে। তার ফুসফুসে গুলি থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রবিবার বিকালে ঢাকা বক্ষব্যধি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

আবার, গণপিটুনিতে নিহত জিহাদের মরদেহ তিনদিন পর রবিবার পুলিশ প্রহরায় গোপনে যোগীপোল কবরস্থানের পাশে জানাযা শেষে দাফন করা হয়েছে। এর আগে নিহতের মামা সিরাজুল ইসলাম রবিবার বিকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জিহাদের লাশ গ্রহন করেন। লাশটি মশিয়ালী তার গ্রামে না নিয়ে এ্যাম্বুলেন্স যোগে মাগরিবের আগে পুলিশ প্রহরায় যোগিপোল ৭নং ওয়ার্ডের চেয়ারম্যানের কবরস্থানে আনা হয়। পরে সেখানে নিহতের গোসল করিয়ে মাগরিব নামাজের পর জানাযা শেষে কবরস্থানে দাফন করা হয।

প্রসঙ্গত্ব, বৃহস্পতিবার মশিয়ালী গ্রামে জাকারিয়া-জাফরীন-মিল্টন গংদের গুলিতে তিনজন নিহত হয়; পরে গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে জাকারিয়ার চাচাতো ভাই জিহাদ মারা যায়। এসব ঘটনায় নিহত সাইফুলের পিতা বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উলে¬খসহ অজ্ঞাত আরও ১৫-১৬জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন।

খুলনা গেজেট/এআইএন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন