দুই বছর ধরে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স নবায়ন নেই। নেই পর্যাপ্ত জনবল ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ। দীর্ঘদিন ধরেই মানহীন এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো অবৈধভাবে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম।
প্রশাসন আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দাপটেই পরিচালিত হচ্ছে তাদের মানহীন কার্যক্রম। ফলে প্রায়ই ঘটছে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুসহ নানা দুর্ঘটনা।
কোন দুর্ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই পার পেয়ে যায় অবৈধভাবে পরিচালিত এসব ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ। যেন দেখার কেউ নেই। এছাড়াও শহরের বেশ কয়েকটি ওষুধের ফার্মেসিতে অবৈধভাবে চলছে আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা। সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে কিভাবে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক চলছে তা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন সচেতন মহল।
নীতিমালা ভঙ্গ করার পরও এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পাচ্ছে নতুন লাইসেন্স। নিয়ম বহির্ভূতভাবে কোনরকম শর্তপূরণ ছাড়াই হচ্ছে লাইসেন্স নবায়ন।
অভিযোগ উঠেছে জেলার সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে চলছে মানহীন এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। মাঝে মাঝেই ঘটছে প্রসূতি ও শিশুমৃত্যুর ঘটনা। গত সপ্তাহে শহরের ভাই ভাই ক্লিনিকে ঘটেছে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা। ওই ঘটনার তদন্তের জন্য জেলার সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে কমিটি করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ওই ক্লিনিকের কার্যক্রম। তবে সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও গঠিত তদন্ত কমিটি এখনও কার্যক্রম শুরু না করাই প্রশ্ন উঠেছে সঠিক তদন্ত নিয়ে। আদৌ তদন্ত হবে কিনা! দোষীরা শাস্তির আওতায় আসবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন ভুক্তভোগীর পরিবার ও সাধারণ মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হরিণাকুন্ডু বাজারের অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এভাবেই চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। এছাড়াও কোনরকম লাইসেন্স বা ল্যাব টেকনিশিয়ান ছাড়াও পরিচালিত হচ্ছে কয়েকটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ওষুধের ফার্মেসিতে চলছে আলট্রাসনোগ্রামের কার্যক্রম।
শনিবার সরেজমিনে বেশ কয়েকটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সার্বক্ষণিক কোন চিকিৎসক নেই। নেই কোন ডিপ্লোমা সার্টিফিকেটধারী নার্স। রয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। লাইসেন্স নবায়ন করা নেই একটিরও।
জানতে চাইলে এক ক্লিনিকের মালিক বলেন, ‘বাইরের একজন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া আছে। তিনি ঠিকমত আসেন না। লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করা আছে। ডিপ্লোমা নার্স রাখতে গেলে অনেক টাকা বেতন দেওয়া লাগে তাই স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষিত নার্স দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছি।’
কোন রকম লাইসেন্স নবায়ন বা ল্যাব টেকনিশিয়ান ছাড়া পরিচালিত একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বলেন, ‘ভাই এসব নিয়ে ঘেটেন না। আমরা কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে চলি।’ কাকে ম্যানেজ করেন জানতে চাইলে বলেন, ‘সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের কয়েকজনকে নিয়মিত উৎকোচ দিয়ে থাকি।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ জামিনুর রশিদ বলেন, ‘আমি কোন অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার বা পরীক্ষা করি না।’ অবৈধ এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।
সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম বলেন, ‘ জেলার কোন ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এখন কোন লাইসেন্স নেই। সবগুলো নবায়নের জন্য অপেক্ষমান। অনলাইনে সরাসরি আবেদন নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে যেসব প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট চাওয়া হচ্ছে সেগুলো প্রেরণ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘২৩ আগস্টের মধ্যে সবার লাইসেন্স নবায়ন না হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
খুলনা গেজেট/এনএম

