২০২৩ সালের ১৫ আগস্ট শতবাঁধা পেরিয়ে পিরোজপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর দাফন সম্পন্ন হয়। শতবাঁধা উপক্ষো করে এদিন সাঈদীর নামাজে জানাযা’য় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাগেরহাট-পিরোজপুর-মহাসড়ক দিয়ে জানাযা’র উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া মানুষের উপর হামলা হয় একাধিক স্থানে। তখন এসব বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী বা মুসল্লিদের পক্ষ থেকে কোন আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়া হলেও, স্থানীয় কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য ও স্থানীয় জামায়াতের নেতাদের সাথে কথা বলে জানাযা’য়, মহাসড়কের কচুয়া উপজেলার বাধাল বাজারে তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমা সরোয়ার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম খোকনের নেতৃত্বে অন্তত ২০-২৫টি গাড়িতে হামলা করা হয়। হামলায় অন্তত ৩০-৪০ জন মুসল্লি আহত হয়।
হামলায় কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর শিকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিকদার কামরুল আহসান কচি, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর জায়েসি আশরাফী জেমস, যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান ঝুমুর, উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি হাদীসুজ্জামান হাদিস, বাধাল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নকিব ফয়সাল অহিদ, বনগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রিপন দাস অংশগ্রহন করেন। হামলাকারীরা গাড়ি ভাংচুর, মুসল্লিদের মারধরের পাশাপাশি লোকজনের মুঠোফোন ও নগদ টাকা লুটে নেয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শুধু বাধাল বাজার নয়, দড়াটানা টোল প্লাজায়ও মুসল্লিদের গাড়ি বহরে হামলা করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সেখানেও বেশকিছু গাড়ি ভাংচুর এবং মুসল্লিদের মারধর করা হয়। খুলনা থেকে জানাযা’য় যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীদের একটি গাড়িও বাধাল বাজারে হামলাকারীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। বাঁধাল থেকে হামলার শিকার হয়ে খুলনায় ফেরার পথে দড়াটনা টোল প্লাজায় গণমাধ্যমকর্মীদের বহনকৃত সাদা রংয়ের হাইয়েক্স গাড়িটিকে আটক করা হয়। তাদের নানাভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা করেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতারা। পরে খবর শুনে বাগেরহাটের গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের সাথে তাদেরকে খুলনায় পাঠানো হয় বলে জানান বাগেরহাট টেলিভিশন জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হক।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের আটক করার সংবাদ পেয়ে যমুনা টিভির ইয়ামিন আলী, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের আরিফুল ইসলাম, বাংলানিউজের এস.এস শোহানসহ আমরা কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী টোল প্লাজায় যাই। তখন আসরের আজান হচ্ছিল। সেখানে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার খুলনা ব্যুরো চীফ সাংবাদিক নেতা রাশেদুল ইসলাম ও পূর্বাঞ্চলের স্টাফ রিপোর্টার এইচএম আলাউদ্দিনের সাথে আমার কথা হয়। ঘটনাস্থলে তৎকালীন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার নাসির উদ্দিন ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন।
গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলায় যুবলীগ নেতা সরদার নাসির উদ্দিন আমাদের উপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের সমঝোতায় আমরা গণমাধ্যমকর্মীদের খুলনা পাঠাতে সক্ষম হই। সন্ধ্যার পরে টোল প্লাজার ইজারাদার সরদার বদিউজ্জামান (বদি সরদার) অভিযোগ করেন, ‘জানাযা’য় আগতরা টোল প্লাজায় হামলা এবং লুটপাট করেছে।’ তবে পুলিশ তখন এ অভিযোগের কোন সত্যতা পায়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ও মানব জমিনের ব্যুরো প্রধান রাশেদুল ইসলাম বলেন, আল্লামা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর জানাযায় যাওয়ার অপরাধেই মুসল্লিদের উপর হামলা করা হয়। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও, তারা মুসল্লিদের সহযোগিতা করেনি। বরং পুলিশ সদস্যরা মুসল্লিদের ব্যক্তিগত পরিচয় লিপিবদ্ধ করে পরে হেনস্থা করার উদ্দেশ্যে। এসব ঘটনায় পরবর্তীতে কোন মামলা বা হামলাকারীদের বিচার হয়নি। যারা জানাযা’য় গেছিল তারা বেশিরভাগ ছিলেন সাঈদীর অনুসারী সাধারণ মানুষ। তাই পরবর্তীতে তারা এই অন্যায়ের বিচারের জন্য মামলা করেননি।
এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, তখন যারা হামলার শিকার হয়েছেন পরিস্থির কারণে কেউ মামলা করার সুযোগ পায়নি। মামলা করার মত পরিবেশ ছিল না। আহত মুসল্লি এবং দলীয়ভাবে পরামর্শ করে এই ন্যাক্কার জনক ঘটনার বিচারের জন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান এই নেতা।
খুলনা গেজেট/এসএস