নানাবিধ সমস্যা থাকা সত্ত্বেও

চুলকাঠি ও পোলেরহাট বাজারের উন্নয়ন খাতের টাকা ব্যয় হচ্ছে না

আরিফ ঢালী, চুলকাঠি

বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের চুলকাঠি ও পোলেরহাট বাজারের ইজারা ডাকের ১৫% উন্নয়ন ফান্ডের টাকা কয়েক বছর ধরে ব্যয় হচ্ছে না। বাজারগুলি বিভিন্ন সমস্যাতো রয়েছে। এছাড়াও প্রজেক্ট আকারে বাজারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজও করা যায়। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দিন এই চার বছরের টাকা তোলেননি। বাজারের বিভিন্ন সমস্যা থাকা সত্ত্বেও কেন উন্নয়নমূলক কাজ করা হচ্ছে না- এ প্রশ্ন ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ও সুধী মহলের।

জানা যায়, চুলকাঠি বাজারের দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭ থেকে ৮ শ’। এতো বড় বাজারে ব্যবসায়ী ও বাজারীদের সুপেয় খাবার পানি ছিল না। এই ৪ বছরে তিনি বাজারে ব্যবসায়ী ও বাজারীদের পানির চাহিদা মেটাতে কোন টিউবওয়েল বরাদ্দ দেননি। ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন, বাজারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান আর কি হতে পারে ? তাছাড়া বাজারের মধ্যেই রয়েছে একটি জামে মসজিদ, যেখানে কয়েকশ’ লোক প্রতি ওয়াক্তে নামাজ পড়ার জন্য ওজু করেন। দুর্দশার কথা জানার পর পার্শ্ববর্তী রাখালগাছি ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবু শামীম আছনু মসজিদের সামনে একটি টিউবওয়েল দেন। এমপি শেখ তন্ময় বাজারের সুপেয় পানির অভাবে বাজারীদের দুর্দশার কথা জেনে বাজারে দু’টি টিউবওয়েল ও চুলকাঠি প্রেস ক্লাবে একটি টিউবওয়েল বরাদ্দ দেন।

চুলকাঠি বাজারের পানি নিস্কাশনে ড্রেনও সংস্কার দরকার। চুলকাঠি বাজারের পাবলিক টয়লেটটি সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার অনুপযোগী রয়েছে। বাজারে প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে। বাজারের নষ্ট এনার্জী বাল্বগুলি অর্থের অভাবে বদলানো হচ্ছে না। বাজারের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ব্যবসায়ীরা চাঁদা দিয়ে সমাধান করেন।

বাজার কমিটির সভাপতি মুরারী কৃষ্ণ নন্দী ও সাধারন সম্পাদক ফকির মনিরুজ্জামান জানান, চুলকাঠি বাজারের বহুবিধ সমস্যা রয়েছে। সমস্যার সমাধান ও উন্নয়ন কাজ করার দায়িত্ব ইউপি চেয়ারম্যানের। শুনেছি বাজারের উন্নয়নের কয়েক লক্ষ টাকা রয়েছে। কেন বাজারের উন্নয়ন কাজ হচ্ছে না- তা তারা জানেন না। তবে তারা দ্রুত বাজারের কাজ করার দাবি জানান।

পোলেরহাট বাজারেও রয়েছে বহুবিধ সমস্যা। পানি নিস্কাশনের ড্রেন নির্মাণ, চান্দিনা মেরামত ও বাথরুম সংস্কার অতি জরুরি। বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক জানান, বাজারের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু আবেদন মঞ্জুর হয়নি। অথচ তিনি জানেন না বাজারের উন্নয়নে এতো টাকা রয়েছে। তিনি দ্রুত বাজারের উন্নয়ন কাজ করার দাবি জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে জানা যায়, খানপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানের সময়ে ৪ বছরের হাট বাজারের ইজারা টাকার ১৫% উন্নয়ন কাজের কয়েক লক্ষ টাকা ফান্ডে রয়েছে। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর এখনও পর্যন্ত উন্নয়ন ফান্ডের টাকা নিয়ে কোন কাজ করেননি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চুলকাঠি বাজারে ১৪২৪ সালে ইজারার ডাক ১১,০৭,০০০ টাকা, ১৪২৫ সালে ১৪,২১,৬০০ টাকা, ১৪২৬ সালে ১৬,২১,৬১০ টাকা এবং ১৪২৭ সালে ১৪,৬৮,৫১০ টাকা। এই ৪ বছরের চুলকাঠি বাজারের হাট-বাজারের ইজারার ৫৬,১৮,৭২০/- টাকা ডাক হয়। বাজারের উন্নয়নমূলক কাজে ইজারার ১৫% অর্থাৎ ৮,৪২,৮০৮ টাকা রয়েছে। যা বাজারের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করার কথা।

একইভাবে ইউনিয়নের পোলেরহাট বাজারে ১৪২৪ সালে ইজারার ডাক ১,৫১,০০০ টাকা, ১৪২৫ সালে ১১,০৫,০০০ টাকা, ১৪২৬ সালে ১০,২০,০০০ টাকা এবং ১৪২৭ সালে ১৪,৬৮,৫১০ টাকা মিলে এই ৪ বছরে চুলকাঠি বাজারের হাট-বাজারের ইজারার ১০,৮৭,০০০ টাকা ডাক হয়। বাজারের উন্নয়নমূলক কাজে ইজারার ১৫% অর্থাৎ ৫,০৪,৪৭৬ টাকা বাজারের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করার কথা। ইউনিয়নের কালিবাড়ি নামের আরেকটি বাজারের ৪ বছরের ইজারা ডাক ২,৭৩,৩১০ টাকা এবং ১৫% অর্থাৎ ৪০,৯৯৬ টাকা বাজার উন্নয়নে ব্যয় হবার কথা।

তবে এর পূর্বের চেয়ারম্যান তরফদার আমির সময়েও আরও ২/১ বছরের উন্নয়ন ফান্ডের টাকা আছে কি না তাৎক্ষনিকভাবে তা জানা যায়নি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সর্দার নাসির উদ্দিন জানান, তিনি খানপুর ইউপি চেয়ারম্যানকে দ্রুত উন্নয়ন ফান্ডের টাকা দিয়ে কাজ করার কথা বলেছেন।

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দিন জানান, কাজ করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ছিল না, এখন পরিবেশ তৈরি হয়েছে। রেজুলেশন করে দ্রুত কাজ করা হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন