শনিবার । ১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ । ৩০শে কার্তিক, ১৪৩২

রেকর্ড ৫৮৭ রানে ইনিংস ঘোষণা বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

শুরুটা করে দিয়ে গিয়েছিলেন দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও সাদমান ইসলাম। তাদের দেখানো পথে হাঁটলেন শান্ত ও মুমিনুলরা। ব্যাটারদের দাপটে সিলেটে প্রথম টেস্টে দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ।

১৪১ ওভারে ৮ উইকেটে ৫৮৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। যা টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের তৃতীয় দলীয় সর্বোচ্চ, একই সঙ্গে দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ। প্রথম ইনিংসে আয়ারল‍্যান্ড করেছিল ২৮৬ রান। বাংলাদেশকে ফের ব‍্যাটিংয়ে নামাতে ৩০১ রান করতে হবে সফরকারীদের।

বাংলাদেশের প্রথম ছয় ব‍্যাটারের পাঁচজনই পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছেন। ২৮৬ বলের ইনিংসে ১৪ চার ও ৪ ছক্কার সাহায্যে সর্বোচ্চ ১৭১ রান এসেছে ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের ব‍্যাট থেকে। ১০০ রান করেন অধিনায়ক শান্ত। আয়ারল‍্যান্ডের হয়ে ৫ উইকেট নেন ম‍্যাথিউ হামফ্রিজ।

ব্যাটারদের দাপটের টেস্টে প্রথমবারের মতো একটি ঘটনারও সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এবারই প্রথম, টপ-অর্ডারের প্রথম চার ব্যাটসম্যানই পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছেন। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো সিলেটে পাঁচশো ছাড়ানো সংগ্রহ পেল বাংলাদেশ। এর আগে এই ভেন্যুতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ৩৩৮ রান। ৃএর আগে মাহমুদুল হাসান জয়ের অনবদ্য ১৭১ রানের ইনিংস এবং সাদমান ইসলাম ও মুমিনুল হকের হাফসেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় দিনেই স্বাগতিকরা ৫২ রানের লিড নিয়েছিল। গতকাল (বুধবার) দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ৩৩৮ রান। অপরাজিত দুই ব্যাটার আজ তৃতীয় দিনে খেলতে নেমে বেশিক্ষণ (১৯ বল) টিকতে পারেননি। মাত্র ৯ বলের ব্যবধানে ফিরে গেছেন মুমিনুল-জয় উভয়েই। ব‍্যারি ম‍্যাককার্থির বলে আউট হয়ে মুমিনুল ৮২ এবং জয় ক্যারিয়ারসেরা ১৭১ রানের ইনিংস খেলে ফিরেছেন।

সফরকারী আয়ারল্যান্ডের জন্য আগের দিনটা ছিল হতাশার। প্রথম ইনিংসে তাদের করা ২৮৬ রান টপকে বাংলাদেশ ৫২ রানের লিড নেয়। সে হিসেবে তৃতীয় দিনের শুরুটা দারুণভাবেই করে আইরিশরা। গতকাল ৮০ ওভার শেষে নতুন বল নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নেননি দলটির অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নি। আজ সকালেই তারা নতুন বল নিয়ে প্রথম আঘাতটা হানে জয়কে ফিরিয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির পথে থাকা এই ডানহাতি ব্যাটার ম্যাককার্থির বেশ বাইরের বল খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষক লরকান টাকারকে ক্যাচ দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে জয়-মুমিনুলের ১৭৩ রানের জুটি ভাঙে। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে জয় ২৮৬ বলে ১৭১ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন ১৪ চার ও ৪ ছক্কার সাহায্যে। এর মাত্র ৯ বলের মাথায় ম্যাককার্থিই ফেরালেন মুমিনুলকে। ডেলিভারিটি ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে, কিন্তু হালকা বাঁক নিয়ে সেটি ভেতরের দিকে ঢুকে যায়। মুমিনুল সম্ভবত সেটা আশা করেননি। তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বলটি দ্বিতীয় স্লিপে থাকা বালবার্নির হাতে ধরা পড়ে।

শততম টেস্টের দ্বারপ্রান্তে থাকা মুশফিক অবশ্য ব্যাটারদের দাপটের টেস্টে কিছুটা ম্লানই থাকলেন। মাত্র ২৩ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। মুশফিকের বিদায়ের পর লিটন দাসকে নিয়ে ভালো জুটি গড়েন শান্ত। ১০৭ বলে ৯৮ রান আসে দুজনের জুটি থেকে। যদিও ফিফটির পরই ফিরে গেছেন লিটন। স্পিনার হামফ্রিসের বলে লং অনে ক্যাচ আউট হওয়ার আগে ৬০ রান করেছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। ক্রিজে নামার পর থেকেই অনেকটা ওয়ানডে মেজাজে খেলছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সেঞ্চুরির দোড়গোড়ায় গিয়ে কিছুটা ধীরলয়ে ব্যাটিংয়ে যেন অপেক্ষা বাড়াচ্ছিলেন। শেষপর্যন্ত অপেক্ষা আর আক্ষেপে পুড়তে দেননি। ক্যারিয়ারের অষ্টম ও চলতি বছরে তৃতীয়বারের মতো সেঞ্চুরি তুলে নিলেন মোটে ১১২ বল মোকাবিলায়। যদিও শতক হাঁকানোর এক বল পরই ম্যাকব্রেইনের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফিরে গেছেন টাইগার কাপ্তান।

শান্তর বিদায়ের পর শেষ স্বীকৃত ব্যাটার ছিলেন কেবল মেহেদী হাসান মিরাজ। ইনিংস খুব বড় করতে পারেননি অবশ্য। ৩৩ বলে ১৭ রান করে সাজঘরে ফিরে গেছেন। এরপর আরও একটি উইকেট পড়তেই ইনিংস ঘোষণা করে দেয় বাংলাদেশ। অবশ্য ততক্ষণে লিড বেড়ে দাঁড়ায় ৩০১ রানের।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন