বৃহস্পতিবার । ২রা অক্টোবর, ২০২৫ । ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২

তামিমের অভিযোগ, ইশরাকের হুঁশিয়ারি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কাছে তামিম ইকবালের চাওয়া ছিল বিসিবিতে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন। প্রিয় ক্রিকেটারের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে সেদিন মৌন সায় দিয়েছিলেন উপদেষ্টা। সেই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ এত দ্রুত তিক্ততায় রূপ নেবে, কে জানত। তামিম নিজেও ভাবেননি বিসিবির নির্বাচনে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনতে হবে তাঁকে। গতকাল সেই বাস্তবতার মুখোমুখি হলো দেশের ক্রীড়াঙ্গন।

‘সরকারি হস্তক্ষেপ ও সভাপতির (বিসিবি) নির্বাহী ক্ষমতার অপপ্রয়োগের প্রতিবাদ’ ব্যানারে ঢাকার একটি হোটেলে জেলা, বিভাগ ও ক্লাব সংগঠকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তামিম। যেখানে উপস্থিত থেকে বিএনপির ক্রীড়া সংগঠকরা প্রতিবাদী ছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে। বিসিবি নির্বাচনে সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে ঘেরাওসহ কঠিন কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।

বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন হয় তিনটি ক্যাটেগরিতে। জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে ১০ জন পরিচালক নির্বাচিত হন কাউন্সিলরদের ভোটে। এই ক্যাটেগরিতে কাউন্সিলর মনোনয়নে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলা হয় বিএনপি সমর্থিত প্যানেল থেকে। বিশেষ করে, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর মনোনয়নে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ও বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের চিঠি ইস্যু নিয়ে তামিম বলেন, ‘১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেসব কাউন্সিলর দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো বাতিল করে অ্যাডহক কমিটির সদস্যদের মনোনীত করতে বলা হয়েছে। আমরা জানি, জেলা প্রশাসক চাইলে যে কোনো জায়গা থেকে যোগ্য কাউন্সিলর দিতে পারেন। বিগত সময় থেকে বহু উদাহরণ দেওয়া যাবে। অথচ বিসিবি সভাপতি কমিটির বাইরে থেকে দেওয়া কাউন্সিলরদের বাতিল করে দিচ্ছেন।’

কাউন্সিলর মনোনয়নে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। এই বিষয়টিকে সরাসরি সরকারি হস্তক্ষেপ মনে করেন তামিম। জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম এই সরকার একটি দৃষ্টান্ত রেখে যাবে। এই যদি হয় দৃষ্টান্ত, তাহলে কীভাবে হবে।’

বিসিবি সভাপতির চিঠি পেয়ে কাউন্সিলরশিপ বাতিল করা হয় এমন নজির চাওয়া হলে চট্টগ্রাম বিভাগের ইসরাফিল খশরু মাইক টেনে নিজের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে বলে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটের নির্বাচনে সরকারের হস্তক্ষেপ অনাকাঙ্ক্ষিত। তারা বিসিবিতে এই মানসিকতা দেখালে জাতীয় নির্বাচনে কী হবে?’

ক্লাব ক্যাটেগরি থেকে পরিচালক পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া ইশরাক হুঁশিয়ারি দেন, ‘তারা যেভাবে ক্ষমতা ব্যবহার করে ডিসিদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তা সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্রবিরোধী। এই হস্তক্ষেপ অবিলম্বে বন্ধ না হলে আমরা বিসিবি ঘেরাও কর্মসূচি দেব। প্রয়োজনে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে।’

১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেওয়া কাউন্সিলরশিপ বাতিল করা হলে আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবিলা করা হবে বলে জানান বিএনপির ক্রীড়া সংগঠকরা। তামিম ইকবালরা যখন প্রতিবাদের সংবাদ সম্মেলনে ব্যস্ত, ঠিক তখন নির্বাচনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিসিবি। ২২ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত আপত্তি গ্রহণ, ২৪ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত আপত্তির ওপর শুনানি, ২৫ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, ২৬ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র বিতরণ, ২৮ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিল, ২৯ সেপ্টেম্বর যাচাই-বাছাই ও বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ, ৩০ সেপ্টেম্বর আপিল ও শুনানি, ১ অক্টোবর প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও বৈধ প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ, ৬ অক্টোবর পোস্টাল, ই-ব্যালট বিতরণ, নির্বাচন ও ফল প্রকাশ করা হবে।

এদিকে, বিসিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গঠনতন্ত্রের ৯.১ ধারা মোতাবেক জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে নির্বাচিত বা অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর মনোনয়ন করার বাধ্যবধকতা রয়েছে। ২০২৪ সালে সংশোধিত ও এনএসসি কর্তৃক অনুমোদিত গঠনতন্ত্র এই নিয়ম রয়েছে বলে জানায় বোর্ড।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন