সোনারগাঁও হোটেলের কাছেই আন্তর্জাতিক মানের শপিংমল থাকার পরও পাকিস্তানের ক্রিকেটার বা কোচিং স্টাফের কেউই কেনাকাটা করতে যাননি। হোটেলের লবি, জিম ও সুইমিংপুলেই সীমিত ছিল সালমান আগাদের বিচরণ। আসলে জিততে এসে হোয়াইটওয়াশের শঙ্কায় থাকলে বেড়ানো, কেনাকাটা কোনো কিছুই হয় না।
বাংলাদেশের কাছে টি২০ সিরিজ হারের পর সে দুশ্চিন্তাই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের। তাদের আশঙ্কা আজ সত্যি হয়ে যেতে পারে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানকে প্রথমবারের মতো টি২০তে হোয়াইটওয়াশ করে দিতে পারে বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওয়ানডে জয়ের রেকর্ড পুরোনো। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে বাজিমাত করেছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুলরা। এই মিরপুরে ২০১৫ সালে মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল তারা। সেই সময় একমাত্র টি২০ ম্যাচেও হেরেছিল দলটি। এরই ধারাবাহিকতা পরের বছর টি২০ এশিয়া কাপে দেখাতে পেরেছে বাংলাদেশ। যদিও পরের ৯ বছর আর পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০ ম্যাচ জিততে পারেননি লিটনরা। গত মে মাসেও লাহোরে বেধড়ক পিটুনি খেয়ে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছেন তারা। এবার তা ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। আজ সিরিজের শেষ ম্যাচটি জিতে গেলে ইতিহাস হবে।
ওয়ানডের পর টি২০তেও পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের ইতিবৃত্ত লেখা হবে রেকর্ড বুকে। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং খুব খারাপ না করলে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। মঙ্গলবার সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে জাকের আলী বলেছেন, শেষটা জয়ে রাঙাতে অলরাউন্ড ক্রিকেট খেলতে চান তারা।
বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা সফর থেকেই ভালো ক্রিকেট খেলছে। টি২০তে স্বাগতিকদের ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়ে ছন্দটা দেশে নিয়ে এসেছে। নিজেদের ভালো খেলার পাশাপাশি, কন্ডিশনের সুবিধা, পাকিস্তানের ভুল করা সিরিজ জিততে সহায়ক হয়েছে। এই সিরিজ জয়ে বাংলাদেশ দলকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন পাকিস্তানের সাবেকরা। রমিজ রাজারা পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তাদের ক্রিকেটারদের ব্যর্থতাকে বড় করে দেখেছেন। আমির সোহেলের মতে, বিপিএল খেলার অভিজ্ঞতা থাকার পরও শ্রাবণে মিরপুরের উইকেট পড়তে ভুল করা, প্রথম থেকে তীব্রতা (হাই ইনটেনসিটি) নিয়ে খেলার চেষ্টা ছিল ভুল। বিশেষ করে ব্যাটাররা নেমেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে গিয়ে উইকেট বিসর্জন দিয়েছেন বলে দাবি তাঁর। সালমান বাটরা এ ক্ষেত্রে কোচ মাইক হেসনের ভুল দেখেন বেশি। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের আগের জেনারেশন যে এখনও উপমহাদেশের কন্ডিশন ভালো বোঝেন না, মাইক হেসন তার প্রমাণ বাংলাদেশে দিয়েছেন বলে মনে করেন পাকিস্তানের সাবেকরা। প্রথম ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে উইকেটের সমালোচনা করতে গিয়ে হেসন এক পর্যায়ে নিজের ভুল স্বীকারও করেছেন। উইকেট পড়তে ভুল হয়েছে বলেছিলেন তিনি। পাকিস্তান কোচের এই ব্যর্থতার দায় নিশ্চয়ই বাংলাদেশ নেবে না।
প্রতিটি ক্রিকেট খেলুড়ে দেশেরই নিজস্ব স্টাইল থাকে। পিচের বৈশিষ্ট্যও ভিন্ন হয়। এ কারণে অস্ট্রেলিয়ানরা নিউজিল্যান্ডে গিয়ে সংগ্রাম করেন। ইংলিশ ক্রিকেটাররা চ্যালেঞ্জের মুখে থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। ভারতে খেলতে এসে বিশ্বসেরা দলও হোঁচট খায়। পাকিস্তানের ব্যাটিংবান্ধব কন্ডিশনে সংগ্রাম করে বাংলাদেশ। বিসিবি একটু স্লো ও লো উইকেট বানালে দোষ হবে কেন? এ কারণেই হয়তো পাকিস্তানের একজন সাবেক ক্রিকেটারও চলমান টি২০ সিরিজের পিচের সমালোচনা করেননি। বরং তাদের খেলোয়াড়দের কন্ডিশন বুঝতে না পারাকে বড় করে দেখছেন। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা এ ক্ষেত্রে মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। অধিনায়ক লিটনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত ছিল বিচক্ষণ। যে কারণে টানা দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিতে পেরেছেন।
সিরিজ হারে সালমান আগারা দুশ্চিন্তায় থাকলেও লিটনরা ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন। গতকাল বিরতির দিন ছুটির মেজাজে কেটেছে তাদের। হোটেলবন্দি না থেকে খেলোয়াড়দের কেউ কেউ পরিবার নিয়ে সময় কাটান। শেষ ম্যাচের গেম প্ল্যান নিয়ে কোচ ফিল সিমন্স মিটিংও করেছেন। তবে বেশি ভালো ছিল গতকালের নৈশভোজ। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে ঢাকায় আসা এশিয়ান দেশগুলোর ক্রিকেট বোর্ড প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ক্রিকেটাররাও নৈশভোজ পার্টিতে ছিলেন। এর চেয়েও বড় পার্টি তুলে রাখা হয়েছে। পাকিস্তানকে আজ শেষ ম্যাচে হারাতে পারলেই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেই হবে হোয়াইটওয়াশের পার্টি।
খুলনা গেজেট/এএজে