Edit Content
খুলনা বাংলাদেশ
বুধবার । ২৩শে জুলাই, ২০২৫ । ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content

দারিদ্র্যে হার না মানা ১১ স্বর্ণজয়ী এ্যাথলেট, প্রশিক্ষক ও সংগঠক মুরাদুল ইসলাম

একরামুল হোসেন লিপু

মুরাদুল ইসলাম। একজন দক্ষ জাতীয় এ্যাথলেটিক্সে সেরা পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়া সংগঠক, বিজেএমসি’র এ্যাথলেটিক্সের প্রশিক্ষক, বাংলাদেশ এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের বিচারক, একাধিক স্বর্ণজয়ী সাবেক জাতীয় এ্যাথলেটার। ১৯৯০-৯৪ সাল পর্যন্ত বিজেএমসি’র কেন্দ্রীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ৪০০ মিটার হার্ডলে তার গড়া রেকর্ড অক্ষুন্ন ছিল। জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জেলা বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে ১০টি স্বর্ণপদক এবং জাতীয় এ্যাথলেটিক্সে একটি স্বর্ণ, তিনটি রৌপ্য ও তিনটি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেন। এছাড়া ২০০, ৪০০, ৮০০ ও ১৫০০ মিটার দৌড়ে জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে সুনাম এবং কৃতিত্ব অর্জন করেন।

২০১৩ সালে জাতীয় এ্যাথলেটিক্সে সেরা সংগঠকের পুরস্কার লাভ করেন। বর্তমানে কর্মরত আছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিজেএমসি’র অধীনস্থ যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (জেজেআই)’র সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও প্রশাসন বিভাগীয় প্রধান হিসেবে।

দক্ষতা যোগ্যতা এবং সততার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের জাতীয় গেমসের বিচারক, দেশে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান গেমসের বিচারক, বিজেএমসি’র এ্যাথলেট প্রশিক্ষক হিসেবে।

এছাড়াও খুলনা জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার প্রশিক্ষক হিসেবে দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে দক্ষতা, যোগ্যতা এবং সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। ঐতিহ্যবাহী দিঘলিয়া ওয়াইএমএ ও দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাবের সদস্য এবং দিঘলিয়া নওজোয়ান একাদশ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ক্লাবটিকে পরিচালনা করছেন।

২০০২ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন, ২০১৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল এ্যামেচর অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় আই এএএফ লেবেল-১ ইয়থ কোচ ট্রেনিং সম্পন্ন করে লেভেল ওয়ান কোচের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। একই বছর ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক ভেরানে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে হয়ে অংশগ্রহণ করেন।

২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গ্লোবাল প্রতিযোগিতার প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, ২০১৬ সালে সাউথ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ দলের টিম অফিশিয়াল হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

মুরাদুল ইসলাম দারিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়ী হওয়া সাফল্য অর্জনকারী এক অদম্য পুরুষ। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামে।

একান্ত আলাপচারিতায় মুরাদুল ইসলাম খুলনা গেজেটের এ প্রতিবেদকের কাছে নিজের দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে কিভাবে সাফল্যে পৌঁছেছেন সে কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে পিতার মৃত্যুর পর সংসারে নেমে আসে চরম দারিদ্রতা। তিন মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার চালানো মায়ের পক্ষে কঠিন হয়ে ওঠে। বাবার মৃত্যুর পর যেটুকু সম্পত্তি ছিল তার সিংহভাগই বেদখল হয়ে যায়। সম্পর্কে বারিক দাদার ছেলে মেয়েদের সঙ্গে পড়াশুনা করতাম। তিন বেলা পেটে ঠিকমত ভাত জুটত না, লেখাপড়ার খরচ বহন তো দূরের কথা। উপরের ক্লাসে পড়তো পার্শ্ববর্তী দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক মোঃ সাইফুর রহমান মিন্টু মোল্লার ছোট ভাই পল্টু মোল্লা। তার পুরানো বই দিয়েই কোনমতে লেখাপড়া চালিয়ে গেছি। একদিকে দারিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি পাশাপাশি অ্যাটলেটিক্সের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি।

কিভাবে অ্যাথলেটিক্সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করব সারাক্ষণ এ ধ্যান-ধারণার মধ্যে মত্ত থাকতাম। কিন্তু স্বপ্ন দেখলেও এটা আমার কাছে অসম্ভব স্বপ্নের মত ছিল। কারণ অ্যাথলেটিক্সের প্র্যাকটিস করার পর প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার খেতে হতো। কিন্তু সে আর্থিক সক্ষমতা ছিল না।

অদম্য সাহস আর নিজের ইচ্ছাশক্তি নিয়ে শুরু করি। বাড়ির পার্শ্ববর্তী দিঘলিয়া ওয়াই এম এ এবং ইউনাইটেড ক্লাব মাঠে অ্যাথলেটিক্সের প্রাকটিস শুরু করি। ভাগ্য সহায় হলো। পার্শ্ববর্তী মরহুম নুরুল হক মাস্টার নামে প্রাইমারি স্কুলের এক প্রধান শিক্ষক খেলাধূলার প্রতি আমার আগ্রহ এবং উৎসাহ দেখে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে শুরু করলেন। এভাবে নিয়মিত প্রাকটিস চালিয়ে যেতে থাকি। পরবর্তীতে একই গ্রামের প্রাক্তন আন্তর্জাতিক ক্রীড়াবিদ মরহুম খান জহুরুল হক আমাকে বিজেএমসিতে খেলোয়াড় হিসেবে নিয়োগ করেন। সেখান থেকে সাপ্তাহিক হারে কিছু টাকা পেতাম। সেটা দিয়ে প্রাকটিস চালিয়ে যেতে আমার জন্য সহজ হয়।

১৯৮৮ সালে তার হাত ধরেই বিজেএমসি’র ক্রীড়া জগতে পদার্পণ করি। এবং পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ও রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত মিলজার হোসেন, জাতীয় এ্যাথলেটার তাহাজ্জোত হেসেন ও খান ওলিয়ার রহমানের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় ক্রীড়া জগতে প্রবেশ করি। এরপর আস্তে আস্তে ক্রীড়া জগতে আমার সাফল্য আসতে শুরু করে। ঘুরে যায় জীবনের মোড়। বর্তমানে স্ত্রী ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখে- স্বাচ্ছন্দে আছি। আলহামদুলিল্লাহ।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন