মঙ্গলবার । ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ । ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

চিকিৎসা ও জ্ঞানচর্চায় বিশেষ অবদান রেখেছিলেন যে নারী সাহাবি

গেজেট প্রতিবেদন

ইসলামরে সূচনাকাল থেকেই মুসলিম নারীরা জ্ঞানচর্চা, সমাজগঠন ও মানবকল্যাণে অসাধারণ অবদান রেখে গেছেন। সেই উজ্জ্বল নক্ষত্রদের একজন ছিলেন নারী সাহাবি শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.)। চিকিৎসক, শিক্ষিকা, বুদ্ধিজীবী— তিনি মুসলিম সমাজে বিভিন্ন পরিচয়ে বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছিলেন তিনি।

শিফা বিনতে আবদুল্লাহ আল-কুরায়শিয়া আল-আদাবিয়া (রা.) ছিলেন মক্কার এক সম্মানিত পরিবারের সন্তান। তার স্বামী ছিলেন আবু হাতমা ইবনে হুযাইফা। সুলায়মান ও মাসরূক নামে তাদের দুই সন্তান ছিল। হজরত ওমর ইবনে খাত্তাবের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল তার ।

তার আসল নাম ছিল লাইলা। চিকিৎসায় অসাধারণ দক্ষতার কারণে ‘শিফা’ উপাধিটি পেয়েছিলেন তিনি।

ইসলামের শুরুর দিকেই তিনি মুসলিম হয়েছিলেন এবং হিজরতের প্রথম সারির সাহাবিদের একজন ছিলেন। মদিনায় তার বাড়ি ছিল মসজিদে নববীর কাছেই। অর্থনীতি ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে তিনি নবীজির পরামর্শদাতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এজন্যই বিখ্যাত হাদিস বিশারদ ইবনে হাজার তাকে বুদ্ধিমতী ও মর্যাদাশীল নারীদের মধ্যে অন্যতম বলেছেন।

সাক্ষরতা ও শিক্ষা বিস্তারে অগ্রগামী নারী
জাহেলি যুগে যখন আরব সমাজে সাক্ষরতা ছিল দুষ্প্রাপ্য, তখন শিফা (রা.) ছিলেন অল্পসংখ্যক শিক্ষিত নারীদের একজন। তিনি শুধু পড়তেই জানতেন না, লিখতেও পারতেন। তার প্রথম ছাত্রী ছিলেন হজরত ওমর (রা.)–এর কন্যা ও নবীজির স্ত্রী হাফসা (রা.)। তার কাছ থেকে শিক্ষা লাভের মাধ্যমেই পরবর্তীতে কোরআনের সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন হাফসা (রা.)।

জ্ঞানার্জনকে সবার জন্য অপরিহার্য মনে করতেন শিফা (রা.)। নবীজির বাণী উদ্ধৃত করে শিক্ষা প্রচারের গুরুত্ব তুলে ধরতেন তিনি। তিনি বলতেন, এক মুসলিম যখন জ্ঞান অর্জন করে ও আরেক মুসলিমকে শিক্ষা দেয়, তা সর্বোত্তম সদকা বলে বিবেচিত হয়।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রথম সারির নারী সাহাবি
তৎকালীন আরব সমাজে চিকিৎসাবিজ্ঞান খুব একটা উন্নত ছিল না। কিন্তু শিফা (রা.) ছিলেন দক্ষ চিকিৎসক। এক ঘটনায় নবীজি (সা.) তাকে হাফসাকে ‘নামলা’ রোগের চিকিৎসা শেখাতে বলেন, যা আজকের ভাষায় ত্বকে ফোস্কা বা র‍্যাশ হিসেবে পরিচিত।

তিনি আল্লাহর নাম পাঠ করে হলুদ ও ভিনেগারের মিশ্রণে বিশেষ ধরনের পেস্ট তৈরি করতেন। সেই চিকিৎসা ব্যাপকভাবে পরিচিতি পায়। এতে প্রমাণিত হয়, চিকিৎসায় নবীজি (সা.) তার জ্ঞানের ওপর কতটা আস্থাশীল ছিলেন।

বাজার ব্যবস্থাপনায় প্রথম নারী কর্মকর্তা
শুধু চিকিৎসা ও শিক্ষা নয়, রাষ্ট্র পরিচালনায়ও সক্রিয় ছিলেন শিফা (রা.)। হজরত ওমর (রা.) তার মতামতকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। মদিনার ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি ও বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে খলিফা হজরত ওমর (রা.) তাকে বাজার তদারকির দায়িত্ব দেন। তিনি ছিলেন ইসলামী ইতিহাসে প্রথম নারী যিনি রাষ্ট্রীয় কোনো পদে আনুষ্ঠানিকভাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।

বাজারে প্রতারণা রোধে তিনি যে ভূমিকা রেখেছিলেন তা তাকে মদিনার ব্যবসায়ীদের কাছে বিশেষ সম্মান এনে দেয়।

মনে রাখুন
শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.)-এর জীবন আমাদের শিখায়- পরিবেশ প্রতিকূল হলেও জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি একজন নারীকে কত উচ্চ স্থানে পৌঁছে দিতে পারে। প্রথম যুগের মুসলিম নারীদের মাঝে শিক্ষা, চিকিৎসা এবং প্রশাসনিক দক্ষতার অনন্য উদাহরণ ছিলেন তিনি।

সূত্র : মুসলিম ডট এসজি

খুলনা গেজেট/এএজে




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন