মঙ্গলবার । ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ । ১৯শে কার্তিক, ১৪৩২

প্রাণীর প্রতি সদয় আচরণ করলে আল্লাহ যে পুরস্কার দেবেন

গেজেট প্রতিবেদন

প্রাণীর প্রতি ভালো ও মন্দ আচরণের ভিত্তিতে মানুষ জান্নাত বা জাহান্নাম লাভ করতে পারে। প্রাণীর প্রতি কোমল আচরণের শিক্ষা দেয় ইসলাম। কোনো প্রাণীকে বিনা কারণে হত্যা করা, খেলার ছলে নির্যাতন করা সবই হারাম ইসলামে। নবী করিম (সা.) মানুষকে পাখি বন্দি করা, পিঁপড়ার ঢিবি পুড়িয়ে দেওয়া বা পশুকে বেত মারতে নিষেধ করেছেন। এমনকি কোরবানি বা হালাল খাবারের জন্য পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রেও ইসলামে মানবিকতা ও কষ্ট কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীর প্রতিটি জীবের প্রতি দয়া করা তার দায়িত্ব।

ইসলামে বিড়াল
নবী করিম (সা.) প্রাণীদের প্রতি দয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তার সময়ে বিড়াল ছিল মানুষের ঘরোয়া সঙ্গী। তিনি বলেছেন, বিড়াল অপবিত্র নয় বরং তারা তোমাদের সঙ্গে মিশে থাকে। এমনকি হাদিসে আছে, বিড়ালের পান করা পানি দিয়েই ওজু করা যায়।

কিন্তু বর্তমানে অনেকেই এ শিক্ষা ভুলে গেছেন। কেউ বিড়াল নির্যাতন করে, কেউ বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করে। তারা কি ভাবে না, আল্লাহ এ জন্য কঠিন শাস্তি দেবেন! সহিহ বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে— এক নারী এক বিড়ালকে বেঁধে রাখে, না খেতে দেয়, না ছেড়ে দেয়; ফলে বিড়ালটি মারা যায়। নবী করিম (সা.) বলেন, এ নারীকে এ কারণেই জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

ইসলামে কুকুর
আজকাল কুকুরের প্রতিও মানুষের আচরণ নিন্দনীয়। অথচ ইসলামে কুকুর অবহেলার নয়, দায়িত্বের প্রতীক। নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে পাত্র কুকুর চেটে দেয়, তা সাতবার ধুতে হবে, প্রথমবার মাটি দিয়ে। (মুসলিম)

এ থেকে বোঝা যায়, কুকুর ঘরে রাখতে নিরুৎসাহ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাকে নির্যাতনের অনুমতি দেয় না। বরং কুকুর পাহারা ও শিকারে উপকারী প্রাণী। কোরআনের সূরা কাহফে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী কিছু যুবক যখন নিপীড়ন থেকে পালিয়ে গুহায় আশ্রয় নেয়, তাদের সঙ্গী ছিল একটি কুকুর।

বিড়ালপ্রেমী সাহাবি যেভাবে আবু হুরায়রা নাম পেলেন
আল্লাহ বলেন, তুমি ভাবতে, তারা জেগে আছে অথচ তারা ঘুমিয়ে ছিল, আর তাদের কুকুর ছিল গুহার প্রবেশমুখে তার দুই পা প্রসারিত করে। (সূরা কাহফ, আয়াত : ১৮)

আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, তুমি যে পশুগুলোকে শিকার শেখাও, সেগুলোর ধরা খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল। (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৪)

কুকুরের তৃষ্ণা মেটানোয় জান্নাত
হাদিসে আছে- এক ব্যক্তি তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি পান করান, ফলে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করেন। এমনকি এক নারী, যিনি পাপিষ্ঠা ছিলেন, তিনি জুতোয় পানি ভরে কুকুরকে খাওয়ান; এ দয়ার কাজেই তিনি জান্নাতের অধিকারী হন। (মুসলিম)

নবী করিম (সা.)-কে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, প্রাণীর প্রতি দয়া করলে কি সওয়াব পাওয়া যায়? তিনি বলেন, হ্যাঁ, প্রত্যেক জীবন্ত প্রাণীর প্রতি দয়া করা সওয়াবের কাজ।।

অতএব, আমাদের উচিত আল্লাহর সৃষ্ট প্রতিটি জীবের প্রতি মমতা প্রদর্শন করা। কারণ, যিনি প্রাণীর প্রতি দয়া করেন, আল্লাহ তার প্রতিও দয়া করেন। প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা শুধু মানবিকতা নয়, ঈমানেরও অংশ।

খুলনা গেজেট/এএজে




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন