ইসলামে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে নারী-পুরুষকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। পুরুষ-মহিলা সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। পরকীয়া একটি সমাজ বিধ্বংসী বিকৃত মানসিকতা। সুস্থ মস্তিষ্কের কোন নারী পুরুষ পরকীয়ায় লিপ্ত হতে পারে না। পরকীয়ার কারণে স্বামী স্ত্রীকে খুন করছে। স্ত্রী স্বামীকে খুন করে খাটের নিচের মেঝেতে পুঁতে রাখছে।পরকীয়ার ফাঁদে আটকা পড়ে আত্মহত্যা করছে অগণিত নারী-পুরুষ; বলি হচ্ছেন নিরপরাধ সন্তান, স্বামী অথবা স্ত্রী। পরকীয়ার পথে বাধা হওয়ায় নিজ সন্তানকেও নির্মমভাবে হত্যা করছে মমতাময়ী মা। পত্রিকার পাতা খুলতেই প্রতিনিয়ত চোখে পড়ে এমন সংবাদ। এ কাজের বিষফল ও ভয়াবহ পরিণতি মানবজাতি কয়েক যুগ ধরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষ্য করে আসছে।
ইসলাম হলো নীতি ও আদর্শের ধর্ম। ইসলামে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে বিরত থাকতে নারী-পুরুষকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। নারীদের কথার আওয়াজকেও সতরের অন্তর্ভুক্ত করে অপ্রয়োজনে পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। একান্ত প্রয়োজনে কথা বলতে হলেও সুরা আহযাবের ৩২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। যাতে নারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোনো পুরুষ আকর্ষণবোধ না করেন। শুধু নারীদেরই নয়, বরং সুরা নুরের ৩০ নম্বর আয়াতে প্রথমে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদেরকে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর ৩১ নম্বর আয়াতে মহিলাদেরকে তাদের দৃষ্টি সংযত রাখার পাশাপাশি তাদের গোপন শোভা অনাবৃত করতে নিষেধ করা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য উৎকৃষ্ট পন্থা। তারা যা কিছু করে আল্লাহ তায়ালা সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত এবং মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের ওড়নার আঁচল নিজ বক্ষদেশে নামিয়ে দেয়।” (সুরা নূর : ৩০-৩১)
অপাত্রে সৌন্দর্য প্রদর্শনকে হারাম করে সবটুকু সৌন্দর্য স্বামীর জন্যই নিবেদনে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কারণ, স্বামী তার স্ত্রীর সৌন্দর্যে মোহিত হলে সংসারের শান্তিই বাড়বে। পক্ষান্তরে স্ত্রীর সৌন্দর্য দিয়ে অন্যকে মোহিত করার পথ অবারিত করলে তা কেবল বিপদই ডেকে আনবে। পুরুষ-মহিলা সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হইও না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।” (সুরা বনি ইসরাইল, ৩২)
ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ বলেন, “ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে এক’শত করে বেত্রাঘাত কর।” (সুরা নুর, ২) হাদীস শরিফে ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে।
রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে, তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে, তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং তার দরিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে, সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।”
হজরত সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবো।”
আর এজন্যই ইসলাম পর্দার বিধান কে ফরজ করেছে। পর্দার বিধান পালন করলে যেমন শান্তি, সম্মান ও আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ হয়, তেমনিভাবে তা লঙ্ঘন করলে হয় অসংখ্য ও অপূরণীয় ক্ষতি এবং দেখা দেয় ধর্মীয়, আত্মিক, পারিবারিক-সামাজিক অবক্ষয়, ধ্বংস ও বিপর্যয়। বেপর্দা ও বেহায়াপনার গুনাহ শুধু নিজের মধ্যেই সীমিত থাকে না এবং বেপর্দা নারীরাই শুধু এর ফলে ভোগান্তির শিকার হয় না, বরং এর দ্বারা অনৈতিকতা, অশ্লীলতা, পরকীয়া, জিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ ইত্যাদি সমাজে বিস্তার লাভ করে। সমাজের সকল কে এর ভয়াবহ করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়। আল্লাহ তায়ালা সকলকে হেফাজত করুন, আমিন।
লেখক : প্রধান শিক্ষক, পশ্চিম বানিয়াখামার দারুল কুরআন বহুমুখী মাদ্রাসা, খতীব বায়তুল আমান জামে মসজিদ খুলনা।
খুলনা গেজেট/এনএম
								
    
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
