বৃহস্পতিবার । ২রা অক্টোবর, ২০২৫ । ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২

জুমার দিনের গুরুত্ব অপরিসীম

মাওলানা মোঃ ফজলুর রহমান

ইসলামের দৃষ্টিতে পবিত্র জুমার দিনের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, “হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন নামাজের আহ্বান জানানো (আযান) হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) এগিয়ে যাও এবং বেচা-কেনা (দুনিয়াবি যাবতীয় কাজকর্ম) ছেড়ে দাও। যদি তোমরা বোঝ, তবে ইহা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। (সূরা জুমা- ০৯)।”

রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।” জুমার দিনের অধিক ফজিলত রয়েছে। জুমার দিন জুমার নামাজের জন্য যে যত তাড়াতাড়ি মসজিদে আসবে সে তত বেশি সওয়াব পাবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যখন জুমার দিন আসে ফেরেশতারা মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে প্রথম থেকে পর্যায়ক্রমে আগন্তুকদের নাম লিখতে থাকে। যে সবার আগে মসজিদে আসে তাহার নামে একটি উট কুরবানির সওয়াব লেখা হয়। তারপর যে আসে তাহার নামে একটি গরু কুরবানির সওয়াব লেখা হয়। তারপর আগমনকারীর নামে একটি বকরি কুরবানির সওয়াব লেখা হয়। তারপর আগমনকারীর নামে একটি মুরগি কুরবানির সওয়াব লেখা হয়। তারপর আগমনকারীর নামে একটি ডিম কুরবানীর সওয়াব লেখা হয়। এরপর যখন ইমাম খুতবা দেওয়ার জন্য দণ্ডায়মান হন তখন ফেরেশতারা তাদের লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনতে থাকেন।”

বুখারি শরিফের হাদিসে রয়েছে নবীজি (সঃ) বলেছেন, “কোনো পুরুষ যখন জুমার দিন গোসল করে, সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করে, তেল ব্যবহার করে বা ঘরে যে সুগন্ধি আছে তা ব্যবহার করে, তারপর (জুমার জন্য) বের হয় এবং (বসার জন্য) দুই জনকে আলাদা করে না অর্থাৎ মসজিদে গিয়ে যেখানে স্থান পায় সেখানেই বসে, এরপর সাধ্যমত নামায পড়ে এবং ইমাম যখন খুৎবা দেয় তখন চুপ থাকে, তাহলে গত জুমা হতে এই জুমা পর্যন্ত তার (সগীরাহ গুনাহ) মাফ করা হয়।” যে ব্যক্তি জুমার দিনে ছয়টি কাজ করবে, সে জুমার নামাযের যাওয়ার পথে প্রতি কদমে (পা ফেলায়) এক বছরের নফল নামায ও এক বছরের নফল রোযার সওয়াব পাবে।

ছয়টি কাজ হলো-

১. জুমার নামাযের উদ্দেশ্যে ভালোভাবে গোসল করা।
২. ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে (আযানের অপেক্ষা না করে) মসজিদে যাওয়া।
৩. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া।
৪. ইমাম সাহেবের নিকটে বসা । অর্থাৎ যতদূর সম্ভব সামনের কাতারে বসা।
৫. মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনা।
৬. খুতবার সময় কোনো কথা না বলা ও কোনো কাজ না করা। (সহিহ ইবনে খুযাইমাহ, হাদিস নং : ১৭৫৮; নাসায়ী, হাদিস নং : ১৩৮৪, তিরমিযী, হাদিস নং : ৪৯৬; আবু দাউদ, হাদিস নং : ৩৪৫ )।

এ ছাড়াও জুমুআর দিনে আরও কিছু আমল করা সুন্নাত । যথা : উত্তম ও পরিষ্কার কাপড় পরিধান করা, আতর লাগানো, সূরায়ে কাহাফ পাঠ করা। পাঠকারীর জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। জুমার দিনের ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো, এই দিনে এমন একটা সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

তিনি বলেছেন, “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, জুমার দিনে একটা এমন সময় আছে, যে সময়ে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলে, অবশ্যই আল্লাহ তাকে তা দান করবেন।” জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সে মহামূল্যবান সময় কোনটা? এ সম্পর্কে একাধিক মতামত পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত দোয়া কবুলের সময়। হজরত আনাস (রাঃ) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “জুমার দিনের কাক্সিক্ষত সময়টা হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত।”

লেখক : খতিব বায়তুল আমান জামে মসজিদ চকমাথুরাবাদ, হরিণটানা, খুলনা।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন