Edit Content
খুলনা বাংলাদেশ
বুধবার । ২৩শে জুলাই, ২০২৫ । ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content

বাণী : এক মহান মাস তোমাদের উপর ছায়াপাত করেছে!

হাফেজ মাওলানা মুফতি জুবায়ের হাসান

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ রব্বুল আলামিনের অশেষ মেহেরবানি তিনি আমাদেরকে রমাযান মাস দান করেছেন রমাযান মাসের গুরুত্ব, ফজিলত ও এর তাৎপর্য সম্পর্কে জানেনা এমন মুসলমান নেই বললেই চলে, আল্লাহ রব্বুল আলামিন এই মাসে বান্দার উপর অসংখ্য অগণিত রহমত নাযিল করেন, অজানা বহু রহমত ও বরকত আল্লাহ রব্বুল আলামিন বান্দাকে দান করে থাকেন। এ মাস কেমন মাস! তা হুজুর আকরাম ﷺ এর বর্ণনায় প্রতিস্ফুটিত হয়,
আল্লাহর নবী ﷺ রমাযানের শুরুতে সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের সামনে কেয়ামত অবধি সকল উম্মতকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে,
قد أَظَلَّكم شهرٌ عظيمٌ، شهرٌ مبارَكٌ
তোমাদের সামনে মহান, বরকতময় একটি মাস ছায়াপাত করেছে, এ মাস কেমন মহান তা অন্যান্য হাদিস দ্বারা প্রমাণ পাওয়া যায়।

এক হাদীসে এরশাদ হয়েছে, নবী করিম ﷺ বলেনঃ
إِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتْ الشَّيَاطِينُ
রমাযান আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানগুলোকে শিকলবন্দী করে দেয়া হয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮৯৯

এ মাসের এমনই মর্যাদা যে, যদি কোন ব্যক্তি এই রমাযানে ইন্তেকাল করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কেয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য তার কবরের আযাব মাফ করে দেন। রমাযান মাস উপলক্ষ্যে আল্লাহ রব্বুল আলামিন জাহান্নামের কয়েদিদের কে মুক্তি দিয়ে থাকেন। এটা এমনই এক মহান মাস যদি কোন ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় এ মাসে রোজা পালন করে এবং রাত্রিবেলায় তারাবিহ এর নামাজ আদায় করে আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার পূর্বকৃত সমস্ত গুনাহগুলোকে মাফ করে দেন।

এরশাদ হয়েছে,
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه ومَنْ قَامَهُ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
-সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০১,২০০৮

আল্লাহ তা’আলা রমাজান মাস বান্দাকে দান করেছেন রমাযানে রোজা কে ফরজ করেছেন এবং তিনি এরশাদ করেছেন,
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে ঈমানদারেরা তোমাদের উপর রমাযানের রোযাকে ফরজ করা হয়েছে যেমনি ভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল যেন তোমরা মুত্তাকী পরহেজগার হতে পারো। -সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৩

মুত্তাকী বলা হয় ঐ সমস্ত ব্যক্তিকে যারা আল্লাহ রব্বুল আলামিনের ভয়ে সব ধরনের নাফরমানিমূলক কর্মকান্ড থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে। সকল গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা এটাকেই বলা হয় তাকওয়া ও পরহেজগারী, এমনকি সন্দেহজনক বিষয় থেকেও নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। রোজার মাধ্যমে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বান্দাকে এই বিষয়েই শিক্ষা দিচ্ছেন।

রোযাদার ব্যক্তির চরম ক্ষুধা লাগা সত্ত্বেও এবং সব ধরনের খাবারের ব্যবস্থাপনা থাকা সত্ত্বেও সে কিন্তু খায় না, কারণ! সে জানে যে, আমি যদি খাই তাহলে আমার রোজাটা নষ্ট হয়ে যাবে এবং আমার রোজা যে নষ্ট হয়ে গেল এটা কেউ না দেখুক আল্লাহ রব্বুল আলামিন দেখছেন, এর দ্বারা শিক্ষণীয় এটাই যে, সমগ্র জীবনে সকল কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে আল্লাহ রব্বুল আলামিন তো দেখছেন এই ধ্যান-ধারণা ও মানসিকতা অন্তরে লালন করে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বিশেষভাবে আমাদেরকে রমাযান মাস দিয়েছেন গুনাহ থেকে নিজেকে পূত পবিত্র করা ও তাকওয়া পরহেজগারী অর্জন করার জন্য।

একটা যান্ত্রিক মেশিন যখন চলমান থাকে, একটা পর্যায়ে তার সার্ভিসিং এর প্রয়োজন হয়, অনুরূপ আমরা সারা বছর দুনিয়ার বিভিন্ন ব্যস্ততা ও কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলাম, এহেন অবস্থায় আমাদের কলবের সার্ভিসিং এর প্রয়োজন। মানবাত্নার সার্ভিসিং এর জন্যই রমাযানের আগমন।

এ রমাযানই আমাদের মহান এক সুযোগ জীবনের সমস্ত গুনাহগুলোকে মাফ করিয়ে নেওয়ার, কেননা রমাযান শব্দের অর্থই হলো জালিয়ে দেওয়া, পুড়িয়ে দেওয়া, নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া, ভস্ম করে দেওয়া, ছারখার করে দেওয়া ইত্যাদি।
রমাযান মাস কে রমাযান নামকরণ কেন করা হলো ওলামায়ে কেরাম তার দুটি কারণ উল্লেখ করেছেনঃ
(ক) যে বছর রমাযান ফরজ হয় সে বছর অত্যন্ত গরমের মৌসুম ছিল একেবারে আগুনে পুড়ে যাওয়ার মত অবস্থা, এজন্য এই মাসকে রমাযান নামকরণ করা হয়েছে।
(খ) অপর একটি মত হল, যেহেতু রমাযান মাসে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বান্দার গুনাহসমূহকে মাফ করে দিয়ে থাকেন বান্দার গুনাহগুলোকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে একেবারে নিঃশেষ করে দিয়ে থাকেন, এজন্যই এই মাসের নামকরণ করা হয়েছে রমাযান।

হুজুর আকরাম ﷺ এর ইরশাদ ব্যাক্ত হয়েছে, সেই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, সেই ব্যক্তির জন্য বড়ই আফসোস! যে ব্যক্তি রমাযান পেল, কিন্তু নিজের গুনাহ গুলোকে মাফ করাতে পারল না। এজন্য অবশ্যই আমাদের গুনাহ গুলোকে মাফ করিয়ে নিতে হবে। তাওবা ইস্তেগফার, যিকির-আযকার, দান-খয়রাত, নামায-তেলাওয়াত, দুআ ও নেক আমলের দ্বারা আমরা আমাদের গুনাহ সমূহ মাফ করিয়ে নিব, ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তায়ালা রমাযান মাসে ৬টি পুরস্কার দ্বারা রোযাদারকে সম্মানিত করেছেনঃ
(ক) রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ রব্বুল আলামিনের নিকট মেশকে আম্বরের চাইতেও বেশি প্রিয়।
(খ) সমুদ্রের মাছ রোযাদারের জন্য মাগফেরাতের দুআ করতে থাকে। অপর একটি রেওয়াতে এসেছে, সমস্ত ফিরিশতাকূল রোজাদারের মাগফেরাত এবং তার কল্যাণ কামনায় আল্লাহ রব্বুল আলামিনের দরবারে দুআ করতে থাকে।
(গ) রোযাদারের সম্মানে জান্নাতকে আল্লাহ রব্বুল আলামিন প্রত্যেকদিন সুসজ্জিত করতে থাকেন।
(ঘ) এ রমাযানে দুর্বৃত্ত বিতাড়িত শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।
(ঙ) রমাযানের শেষ রাতে রোযাদারদের জন্য ক্ষমার ঘোষণা করে দেওয়া হয়।
(চ) এই মুবারক মাসে প্রতিদিন একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে, হে কল্যাণকামী! তুমি এগিয়ে চলো এবং হে অকল্যাণ প্রত্যাশী, পাপাকাঙ্খী! তুমি সংকুচিত ও নিভৃত হও। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৬৮২
রোযার ফজিলতের ব্যাপারে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
عَنْ سَهْلٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ فَيَقُومُونَ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ
হযরত সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করিম ﷺ বলেন, জান্নাতের রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন রোযাদাররা প্রবেশ করবে। তাদের ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেয়া হবে, রোযাদারগণ কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। যাতে করে এ দরজাটি দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮৯৬
অপর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
مَا مِنْ عَبْدٍ يَصُومُ يَوْماً فِي سَبِيلِ اللهِ إِلاَّ بَاعَدَ اللهُ بِذَلِكَ اليَوْمِ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفَاً
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (অর্থাৎ, জিহাদকালীন বা প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনকল্পে) একদিন রোযা রাখবে, আল্লাহ ঐ একদিন রোযার বিনিময়ে তার চেহারাকে জাহান্নাম হতে সত্তর বছর (পরিমাণ পথ) দূরে রাখবেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৮৪০
আল্লাহ তায়ালা সকলকে রমাযানের পবিত্রতা রক্ষা করার তাওফিক দান করুন, আমীন।

লেখক : খতিব, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, কুয়েট।

খুলনা গেজেট/এমএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন