ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস শনিবার ঘোষণা করেছে যে, গাজার ভেতরে তথাকথিত “হলুদ রেখা” অঞ্চলে থাকা সব ইসরাইলি জিম্মির মরদেহ উদ্ধারে তারা প্রস্তুত। এ জন্য মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটিকে (ICRC) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
“হলুদ রেখা” বলতে গাজার সেই অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে, যেখান থেকে ইসরাইলি বাহিনী ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির অধীনে সরে গেছে। এটি কোনো বাস্তব সীমারেখা নয়, বরং একটি কাল্পনিক রেখা, যা গাজা শহরের দক্ষিণ থেকে খান ইউনিসের উত্তরের মধ্যে দিয়ে চলে কার্যত গাজাকে দুই ভাগে ভাগ করেছে।
হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড এক বিবৃতিতে জানায়, তাদের দলগুলো “একই সময়ে ও সব স্থানে ‘হলুদ রেখা’র ভেতরে থাকা শত্রু (ইসরাইলি) বন্দিদের দেহ উদ্ধার করতে প্রস্তুত, যাতে এই অধ্যায়টি শেষ করা যায়।”
বিবৃতিতে তারা মধ্যস্থতাকারী ও রেড ক্রসকে আহ্বান জানায় “একই সময়ে সব দেহ উদ্ধার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দল সরবরাহের” জন্য। হামাস বলছে, এটি জিম্মিদের মরদেহ নিয়ে চলমান বিতর্ক শেষ করার একটি পদক্ষেপ।
হামাস আরও জানায়, তারা শুক্রবার তিনটি অজ্ঞাতনামা মরদেহ হস্তান্তর করেছে, যদিও ইসরাইল প্রথমে কেবল নমুনা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে পূর্ণ দেহ চেয়েছিল। হামাস দাবি করে, তারা “ইসরাইলি শত্রুর অভিযোগ প্রতিহত করতে” এবং প্রক্রিয়ায় বিলম্ব রোধ করতে মরদেহগুলো হস্তান্তর করেছে।
তবে ইসরাইলি গণমাধ্যম শনিবার জানায়, হামাসের হস্তান্তর করা তিনটি মরদেহের কোনোটি ইসরাইলি জিম্মির নয়।
১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের পর হামাস এখন পর্যন্ত ২০ জন ইসরাইলি বন্দিকে জীবিত মুক্তি দিয়েছে এবং ২৮ জনের মধ্যে ১৯ জনের মরদেহ হস্তান্তর করেছে। ইসরাইল দাবি করেছে, হস্তান্তর করা এক দেহ তাদের তালিকাভুক্ত কোনো বন্দির নয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরাইলি হামলায় ২১১ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৫৯৭ জন আহত হয়েছে।
ইসরাইল জানিয়েছে, সব জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে না। অন্যদিকে হামাসের দাবি, গাজার ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ।
চুক্তির প্রথম ধাপে প্রায় ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিমুক্তির বিনিময়ে ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ পরিকল্পনায় গাজার পুনর্গঠন ও হামাসবিহীন একটি নতুন প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৮,৫০০-রও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছে প্রায় ১,৭০,৬০০ জন।
সূত্র: আনাদোলু
খুলনা গেজেট/এএজে

