ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা অভিমুখী আন্তর্জাতিক সহায়তা বহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার’ নৌযানগুলোর মধ্যে একটি ইতোমধ্যেই গাজার জলসীমায় প্রবেশ করেছে। ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার’র লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী ‘মিকেনো’ নামের ওই নৌযানটি বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) গাজার উপকূলে ঢুকে যায়। তবে এটি ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। সূত্র: আল-জাজিরা
এর আগে অন্তত ২৬টি নৌযান গাজার দিকে রওনা হয় বলে জানা যায়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি কমান্ডোদের অভিযানে বর্তমানে কার্যকর নৌযানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪-এ। এর মধ্যে কয়েকটি ইতোমধ্যেই গাজার জলসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে।
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা অভিমুখী আন্তর্জাতিক সহায়তা বহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার’ ১৩টি নৌযান ভূমধ্যসাগরে অবৈধভাবে আটক করেছে ইসরায়েল। এসময় নৌযানগুলোতে থাকা ৩৭ দেশের দুই শতাধিক অভিযাত্রীকে আটক করে নিজেদের বন্দরে নিয়ে যাচ্ছে দখলদার বাহিনীটি।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙতে যাত্রা করা ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র নৌবহরের ওপর হামলা চালিয়ে অন্তত ১৩টি নৌকা আটক করেছে দখলদার বাহিনীটি। এসব ছোট-বড় নৌযানে থাকা ৩৭ দেশের ২০১ জনের বেশি অধিকারকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের মুখপাত্র সাইফ আবু কেশেক।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, ‘আটক হওয়া যাত্রীদের মধ্যে কেবল স্পেন থেকেই রয়েছে ৩০ জন। এছাড়া আটককৃতদের মধ্যে ইতালি থেকে ২২ জন, তুরস্ক থেকে ২১ জন এবং মালয়েশিয়া থেকে ১২ জন রয়েছেন। সুইডেনের অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও এর মধ্যে রয়েছেন।’ আবু কেশেক জানান, আটক ও নৌযান ঘেরাও-এর পরও তাদের মিশন থেমে নেই।
এদিকে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আলোচিত এই গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অভিযাত্রী হয়েছেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম।
আবু কেশেক আরও বলেন, ‘এখন বহরটির অন্য ৩০টি নৌযান ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে গাজার উপকূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। দখলদার বাহিনীর সামরিক জাহাজগুলোর বাধা ঠেকিয়ে এগিয়ে চলেছেন তারা। গাজায় অবরোধ ভাঙতে ভোরের মধ্যেই পৌঁছানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন অংশগ্রহণকারীরা।’
এর আগে ‘গ্লোবাল ফ্লোটিলা’র একটি নৌযানে ইসরায়েলি বাহিনী জলকামান ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১ অক্টোবর) গভীর রাতে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, বহরের ‘ইউলারা’ নামের নৌযানটিতে জলকামান আঘাত হানে।
সুমুদ ফ্লোটিলা নামের বহরের আয়োজকদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়,‘এটি মানবতার সেবায় নিয়োজিত নিরস্ত্র মানুষের ওপর অবৈধ আক্রমণ। আমরা সব সরকার ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানাই-অংশগ্রহণকারীদের তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা ও মুক্তি নিশ্চিত করতে।’
অন্যদিকে ১৩টি নৌযান থামিয়ে দিলেও ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার’ ত্রাণবাহী অন্য ৩০টি ছোট-বড় জাহাজ ইসরায়েলি বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গাজার উপকূল থেকে মাত্র ৮৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে নৌযানগুলো।
লক্ষ্যস্থল গাজা থেকে ১২৯ কিলোমিটার দূরে ভূমধ্যসাগরে বুধবার রাতে ফ্লোটিলার বহরে বাধা দেয় ইসরায়েলি নৌবাহিনী। তাদের অন্তত আটটি নৌযান থামিয়ে দেয়া হয়। সেগুলো হলো—দেইর ইয়াসিন, হিউগা, স্পেক্টার, আদারা, আলমা, সিরিয়াস, আরোরা ও গ্রান্ডি ব্লু। তবে আল জাজিরা ও রয়টার্সের খবরে ১৩টি নৌযান থামিয়ে দেয়ার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
নৌযানগুলো থেকে দুই শতাধিক অধিকারকর্মীকে আটক করেন ইসরায়েলি সেনারা। তাদের মধ্যে সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘হামাস নিয়ন্ত্রিত সুমুদ ফ্লোটিলার কয়েকটি নৌযান নিরাপদভাবে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। আরোহীদের ইসরায়েলের একটি বন্দরে নেয়া হচ্ছে। গ্রেটা ও তার বন্ধুরা নিরাপদ ও সুস্থ আছেন।’
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা। এই নৌবহরে রয়েছে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান। এই বহরে প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০ মানুষের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রথম বহর গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়া ও ইতালির সিসিলি দ্বীপ থেকে আরও নৌযান এই বহরে যুক্ত হয়। এ ছাড়া গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে পরবর্তী সময়ে আরও কিছু নৌযান ত্রাণ নিয়ে বহরে যুক্ত হয়। বর্তমানে বহরটিতে ৪০টি বেশি ছোট-বড় নৌযান রয়েছে।
এই নৌবহরের ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছে ইসরায়েল। যদিও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা। যাত্রাপথে কোনো বাধা না পেলে নৌবহরটির স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকালে গাজার উপকূলে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম
								
    
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
