ক্ষুধার্ত বাসিন্দাদের জন্য ত্রাণবাহী জাহাজ বহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। বুধবার ১২০ নটিক্যাল মাইল বা ২২২ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসার পর বহরের একজন কর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ইসরায়েলের হুমকির কথা জানান। ওই কর্মী হলেন প্রোগ্রেসিভ ইন্টারন্যাশনালের সহসাধারণ সমন্বয়কারী ডেভিড অ্যাডলার।
এক চিঠিতে তিনি ইসরায়েলের হামলার আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, ইতোমধ্যে ইসরায়েলের কয়েকটি জাহাজ ফ্লোটিলাকে ঘিরে ধরেছিল। তারা ক্রুদের ভয় দেখায় এবং বহরের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে। এ সময় বহরের কর্মীদের জীবন নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন অ্যাডলার। বুধবার বিবিসি ও আল জাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
এদিকে ফ্লোটিলা ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট জানিয়েছে, তেলআবিব থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণের আশদোদ বন্দরে প্রায় ৫০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা আশদোদ ও আশপাশের হাসপাতালগুলোকে সতর্ক থাকতেও নির্দেশ দিয়েছে।
গণমাধ্যমটি জানায়, ইসরায়েলি নৌবাহিনীর এলিট স্পেশাল ফোর্স ইউনিট শায়েতেত-১৩ এর সদস্যরা ফ্লোটিলার জাহাজগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেবে। বহরের কর্মীদের ইসরায়েলি নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে তীরে নেওয়া হবে এবং তাদের কারাগারে নিক্ষেপ করা হবে। আর যারা আদেশ মেনে কাজ করবে তাদের ফেরত পাঠানো হবে। কিছু জাহাজকে তীরে টেনে আনা হবে এবং অন্যগুলো সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া হতে পারে। ফলে বহরের ৪৯৭ যাত্রী জীবন শঙ্কায় রয়েছেন। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার নৌ-বহরকে থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ইতালি এবং গ্রীস ইসরায়েলকে কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে এবং জানিয়েছে যে, তারা ঘটনাবলী নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
ডেভিড অ্যাডলার তার চিঠিতে বলেন, ‘আমি আশঙ্কা করছি এটিই হবে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আপনাকে লেখা আমার শেষ চিঠি। আমরা গাজার উপকূল থেকে এখন মাত্র ১২০ নটিক্যাল মাইল দূরে। গত রাতে বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি নৌবাহিনীর জাহাজ আমাদের বহরকে বাধা দিয়েছিল। তারা আক্রমণ করেছিল, ক্রুদের ভয় দেখিয়েছিল এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল।‘
জাহাজে থাকা একজন কর্মী রুস ইয়েকেমা ইনস্টাগ্রামে বলেন, ‘আমরা ইসরায়েল প্রভাবিত অঞ্চলে (মিশরের জলসীমার কাছাকাছি) প্রবেশ করেছি। আগামী ৪৮ ঘণ্টা আমাদের ওপর নজর রাখুন। এখনই ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙার সময়।
ফ্লোটিলার একটি জাহাজের কর্মী স্যামুয়েল রোস্টল আল জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েলি হুমকির মুখে জাহাজের প্রায় সব ক্রু রাতের বেশিরভাগ সময় জেগে কাটিয়েছেন।
জাহাজ আলমায় থাকা থিয়াগো আভিলা বলেন, ইসরায়েলের বাধা দেওয়ার সময় নৌকার ডিভাইসগুলো অচল হয়ে যায়। ক্যামেরা, লাইভস্ট্রিম ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ করছিল না। আরেক যাত্রী লিসি প্রোয়েনকা বলেন, ইসরায়েলি একটি জাহাজ প্রায় ১৫ মিনিট ধরে বহরের চারপাশে চক্কর দিয়েছিল। অন্যরা জানান, বেশ কয়েকটি অজ্ঞাত জাহাজ আলো ছাড়াই নৌবহরে বাধা দেয়।
ফুটেজে দেখা গেছে, ফ্লোটিলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তুরস্কের নৌবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। ফ্লোটিলায় কমপক্ষে ৪৪টি দেশের কর্মী, সাংবাদিক এবং শিল্পী রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থানবার্গ ও নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলা।
ফ্লোটিলার সঙ্গে যুক্ত ছিল ইতালীয় নৌবাহিনীর ফ্রিগেট। কিন্তু ইতালীয় কর্মকর্তারা উপকূলরেখা থেকে ১৫০ নটিক্যাল মাইল (২৭৮ কিমি) দূরত্বে আসামাত্রই তারা নৌবহর ত্যাগ করে।
ফ্লোটিলা রক্ষার আহ্বান
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অস্ট্রেলিয়া ফ্লোটিলায় ড্রোন হামলার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটির ছয় জন নাগরিক জাহাজ বহরে যুক্ত আছেন। ফরাসি এমপি মাথিল্ডে প্যানোট ফ্লোটিলার সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো ফ্লোটিলায় থাকা শত শত মানুষের জীবনের প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
পোপ লিও চতুর্দশও নৌবহরের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আশা করি সহিংসতা হবে না, মানুষকে সম্মান করা হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে রোববার বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে গ্রেটা থানবার্গ এই নৌবহরকে একটি প্রচারণামূলক পদক্ষেপ আখ্যা দেওয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, আমি মনে করি না কেউ প্রচারের জন্য জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলবে।
গত ৩১ আগস্ট স্পেন থেকে যাত্রা শুরু করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা এখন পর্যন্ত গাজায় সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক মিশন। এত ৪৪ জাহাজে ৪৯৭ জন যাত্রী রয়েছে। গত জুন ও জুলাই মাসে গাজায় জাহাজে করে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার আরও দুটি প্রচেষ্টা আটকে দিয়েছিল ইসরায়েল। সূত্র: বিবিসি ও আলজাজিরা
খুলনা গেজেট/এমএম
								
    
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
