অর্থবছরের শেষ দিনেও প্রশাসনের ব্যয় সংক্রান্ত বিল নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা একমত হতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটে এ সংক্রান্ত বিল পাশ করা যায়নি। ফলে অচলাবস্থার মুখে পড়েছে দেশটির সরকার।
শেষ মূহুর্তেও বিলটি অনুমোদন না হওয়ার কারণে সরকারি তহবিল থেকে অর্থ ছাড় স্থানীয় সময় মধ্যরাতে বন্ধ হয়ে গেছে।
এ কারণে জরুরি সেবা ছাড়া অন্য সব সরকারি কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় স্টেট ডিপার্টমেন্টের লোগোর ছবি সহ দেয়া এক পোস্টে বলা হয়েছে, “পূর্ণ কার্যক্রম শুরু না হওয়া পর্যন্ত বরাদ্দের ঘাটতির কারণে জরুরি নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্য ব্যতীত এই অ্যাকাউন্টটি নিয়মিত আপডেট করা হবে না।”
পােষ্টে আরাে বলা হয়েছে, “এই সময়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী পূর্ব নির্ধারিত পাসপোর্ট ও ভিসা সার্ভিস অব্যাহত থাকবে।”
যুক্তরাষ্ট্র এর আগে এ ধরনের শাটডাউন হয়েছিলো ২০১৮-১৯ সালে। তখনও ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
এবারেও শাটডাউন হলে ফেডারেল সরকারে ব্যাপকহারে ‘অপরিবর্তনযোগ্য’ ভাবে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন মি. ট্রাম্প।
তার নির্দেশনা অনুসারে, কয়েকদিন আগেই অফিস অব বাজেট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থাগুলোকে ‘জনবল হ্রাসের’ পরিকল্পনার খসড়া তৈরি শুরু করতে বলেছে।
সাধারণভাবে এ ধরনের শাটডাউনের ক্ষেত্রে জরুরি নয় এমন সরকারি কর্মীরা ‘আনপেইড লিভ’ অর্থাৎ বেতনহীন ছুটিতে থাকেন।
মঙ্গলবারই ছিলো চলতি অর্থবছরের শেষ দিন। এদিনেই সরকারের ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ তহবিলের মেয়াদ শেষ হবার কথা।
কিন্তু সেনেটে বিলটি নিয়ে একমত হতে পারেননি রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট সদস্যেরা।
সাধারণত পহেলা অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রে নতুন অর্থবছর শুরু হওয়ার আগে যদি কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো না যায়, তাহলে শাটডাউন তৈরি হয়।
এর ফলে অপ্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অনেক জরুরি সেবাও বিঘ্নিত হয়।
হোয়াইট হাউজ তাদের ওয়েবসাইটে শাটডাউনের কাউন্টডাউন ঘড়ি চালু করেছে। এতে ‘ডেমোক্র্যাট শাটডাউন’ শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, আমেরিকানরা ডেমোক্র্যাটদের কাজের সাথে একমত নয়।
যদিও রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা এমন পরিস্থিতির জন্য পরস্পরকে দায়ী করেছে। দেশটির কংগ্রেসের উভয় কক্ষ এখন রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে।
তারপরেও তারা বিলটি পাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভোট নিশ্চিত করতে পারেনি।
রিপাবলিকান নেতা জন থুনে বিল পাশে ব্যর্থতার পর হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি সরকারি ব্যয়ের জন্য একটি সমঝোতার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন।
“ডেমোক্র্যাটরা হয়তো সরকারের শাটডাউনের পথ বেছে নিতে পারে। তবে আমি আশা করি এটি কালই আবার চালু হয়ে যাবে,” সাংবাদিকদের বলছিলেন তিনি।
ডেমোক্র্যাটরা তাদের সাথে যোগ দিয়ে সরকারি কর্মকাণ্ড পুনরায় চালু করবেন বলে আশা করেছিলেন তিনি।
তবে, কংগ্রেস যদি শাটডাউন এড়াতে না পারে, সেক্ষেত্রে গণহারে ছাঁটাইয়ের জন্য সরকারি সংস্থাগুলোকে প্রস্তুত রাখার একটি নির্দেশনা আগেই দিয়েছিলো হোয়াইট হাউজ।
হোয়াইট হাউজ থেকে শাটডাউনের বিষয়টি নিশ্চিত করে একটি স্মারক প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে যেসব সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের নিজেদের পরিকল্পনা তৈরির জন্য বলা হয়েছে।
সেনেটে বিলের পক্ষে প্রয়োজনীয় ৬০টি ভোট নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বিলটির পক্ষে ৫৫ ও বিপক্ষে ৪৫ ভোট পড়েছে। সেনেটে রিপাবলিকানদের ৫৩টি আসন আছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ বার এমন শাটডাউনের ঘটনা ঘটেছে।
এটি এক থেকে পাঁচদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিলো বিভিন্ন সময়ে।
প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের সময়ে কম সময়ের জন্য হলেও আটবার এমন পরিস্থিতি হয়েছিলো।
কিন্তু ৯০ এর দশকে এসে এমন শাটডাউনের সময় বেড়েছে।
আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে দুইবার এমন ঘটনা ঘটলো।
সবশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বড়দিন এবং ইংরেজি নববর্ষের ছুটির মুখে লাখ লাখ মার্কিনির দুর্ভোগের আশংকার মধ্যে অর্থ বিল পাশ করে ফেডারেল গভর্নমেন্ট শাটডাউন এড়িয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
এবার দুই সপ্তাহ আগে বাজেট অফিসের নির্দেশনায় সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল যে, কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত যেসব কর্মসূচি, প্রকল্প ও কার্যক্রমের বিকল্প তহবিলের উৎস নেই এবং ‘প্রেসিডেন্টের অগ্রাধিকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’ – সেসবের কর্মীদের স্থায়ীভাবে ছাঁটাই করা হবে।
অনেক ফেডারেল সরকারি সংস্থা কংগ্রেস থেকে অনুমোদিত বার্ষিক তহবিলের ওপর নির্ভর করে।
প্রতি বছর এই সংস্থাগুলো তাদের অনুরোধ জমা দেয়, যা কংগ্রেসকে পাস করতে হয় এবং প্রেসিডেন্টকে পরবর্তী অর্থবছরের জন্য বাজেট আইনে স্বাক্ষর করতে হয়।
পহেলা অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রে নতুন অর্থবছর শুরু হওয়ার আগে যদি কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো না যায়, তাহলে শাটডাউন তৈরি হয়।
এর ফলে অপ্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অনেক জরুরি সেবাও বিঘ্নিত হয়।
দুই সপ্তাহ আগে, মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে রিপাবলিকানরা এবং একজন ডেমোক্র্যাট মিলে ২০শে নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে তহবিল বজায় রাখার জন্য একটি স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা পাস করে, কিন্তু উচ্চকক্ষ সেনেটে ডেমোক্র্যাটরা বিলটি আটকে দেয়।
খুলনা গেজেট/এনএম
								
    
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
