একদা বঙ্গ-বিহার-উড়িষ্যার রাজধানী এখন একটি সর্বনাশা নদী ভাঙনের জেলা। প্রতিবছর মুর্শিদাবাদের ২৮টি থানা এলাকা পদ্মা-গঙ্গা-ভাগীরথী-ময়ূরাক্ষী-দ্বারকা-ব্রবাম্ভণী নদীর ভাঙনে সর্বস্বান্ত মানুষ। হাহাকার আর আহাজারি। স্বাধীনতার ৭৮ বছর পর এর জন্য দায়ী কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দল।
শনিবার জেলার বহরমপুরে এই দাবি করলো সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া (এসডিপিআই)। এদিন দলের পক্ষ থেকে এই নদীভাঙনকে জাতীয় বিপর্যয় বলে ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম বলেন, মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে আমরা বলতে চাই-এই রাজ্যে প্রতিটি রাজনৈতিক দল মানুষদের সঙ্গে, বিশেষ করে মালদা, মুর্শিদাবাদের সঙ্গে অমানবিক ও নির্লজ্জ আচরণ করে আসছে।
কংগ্রেস ক্ষমতায় থেকেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, সিপিআইএম দীর্ঘ ৩৫ বছরের শাসনেও নদী ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি, আর বর্তমান তৃণমূল সরকারও একই পথে চলছে।
তিনি বলেন, আমরা আজ দেখছি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতা ও মন্ত্রী নদী ভাঙনের এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে নাটক করছেন। নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মানুষদের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে রাজনীতি চালানো হচ্ছে, একে অপরকে কাদা ছুঁড়ে রাজনৈতিক সুবিধা তোলা হচ্ছে। এসডিপিআই তাদের এই নির্লজ্জ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
মোহাম্মদ আলী একজন বিধায়ক হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের বলছেন, “আপনারা সরকারি জমি খুঁজুন, ১ নম্বর খতিয়ানের জমি গিয়ে দখল করুন, আমাদের জানান, আমরা পাট্টা দেব।” কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অপদার্থ হলে এ কথা বলা যায়! এটি শুধু প্রশাসনিক অজ্ঞতাই নয়, বরং নিরীহ মানুষদের মধ্যে বিভাজন ও অশান্তি সৃষ্টির উস্কানি।
বিধায়ক মোহাম্মদ আলীকে আমরা বলতে চাই মুর্শিদাবাদ জেলা শাসক, লালগোলর বিডিও বা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির কাছে কি সরকারি জমির তথ্য নেই? প্রশাসন কী করছে? কেন মানুষদের সরকারি জমি খুঁজে নিতে হবে?
তিনি বলেন, এখানেই শেষ নয়, তারানগরে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্যাম্পে দেওয়া খাবারে পোকা পাওয়া গেছে। এটি শুধু অপমান নয়, বরং নিরীহ মানুষের প্রতি প্রশাসন ও সরকারের সর্বনিম্নস্তরের অবজ্ঞা। এটি স্পষ্ট করে দেয় এই সরকার ও তার প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই মুর্শিদাবাদে নদী ভাঙন প্রতিরোধের জন্য রাজ্য সরকার কোনো অর্থের প্রস্তাবই কেন্দ্রকে দেয়নি, কারণ তারা এখনও হিসাব করতে পারেনি কত টাকা লাগবে নদী ভাঙনের স্থায়ী সমাধান করতে তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের ভাগ বসানো শেষ হওয়ার পর।
এসডিপিআই দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করছে মালদা, মুর্শিদাবাদের মানুষের নিরাপত্তা, পুনর্বাসন ও নদী ভাঙন প্রতিরোধের কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সব ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি, আমরা দিল্লী পর্যন্ত যাব।
পাশাপাশি আমরা এই মতামত প্রকাশ করছি রাজনৈতিক স্বার্থ ত্যাগ করে, সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নিয়ে “নদী ভাঙন প্রতিরোধ” কমিটি গঠন করার। ফরাক্কা থেকে জলঙ্গি, সম্পূর্নটা কংক্রিট দিয়ে বাঁধ দিতে হবে তবেই স্থায়ী সমাধান সম্ভব।
এই বিশাল বাজেট পাশ করতে এবং এই পরিকল্পনা এককভাবে রাজ্য সরকারের কাছে হস্তান্তরিত না করে, কমিটি পর্যবেক্ষণ করবে। তা না হলে সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদরা অর্ধেক খেয়ে নেবে।
খুলনা গেজেট/এমআর