মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পকে নিয়ে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে প্রবেশের সময় একটি চলন্ত সিড়িতে ওঠার পরপরই সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাকি ধাপগুলো পায়ে হেঁটে উঠতে হয়। ভাষণ দিতে গিয়ে টেলিপ্রম্পটার ভাঙা দেখতে পান ট্রাম্প। এই দুটি অব্যবস্থাপনা যেন জাতিসংঘের সামগ্রিক দুর্বলতার প্রতীক হয়ে ধরা দেয় তার কাছে।
বক্তব্যে জাতিসংঘের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। সংস্থাটি তার সম্ভাবনা কাজে লাগায়নি বলে অভিযোগ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শান্তি স্থাপন বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের অবস্থা এখন বন্ধ হওয়া চলন্ত সিড়ি বা ভাঙা টেলিপ্রম্পটারের মতোই।
নিজের নির্ধারিত ১৫ মিনিট পার করেও বক্তব্য চালিয়ে যান তিনি। অভিযোগ করেন, অভিবাসীদের নানা সুবিধা দিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোকে আক্রান্ত করছে জাতিসংঘ। শুধু আন্তর্জাতিক সংস্থাটি নয়, সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে শত্রু-মিত্র সবাইকেই নানাভাবে কথা শুনিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
জাতিসংঘে নির্ধারিত ১৫ মিনিটের জায়গায় প্রায় এক ঘণ্টার ভাষণে ট্রাম্প বিভিন্ন ইস্যুতে এমন সব মন্তব্য করেছেন যা মুহূর্তেই নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তার ভাষণে জাতিসংঘের উপযোগিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
অভিবাসন ও জলবায়ু ইস্যুতে ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ থাকার ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন ইউরোপকে। কথা বলেছেন ইউক্রেন, ইরান, গাজাসহ বিবদমান বিভিন্ন বিষয়ে।
অভিবাসন নিয়ে ইউরোপের সমালোচনায় ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন নিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর কঠোর সমালোচনা করেছেন। পাশাপাশি তিনি দাবি করেছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সাত মাসে সাতটি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন। ভারত-পাকিস্তান, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, আর কোনো প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী– এমনকি কোনো দেশ এর ধারেকাছেও নেই। মাত্র সাত মাসে তিনি এটা করেছেন। দুঃখের সুরে তিনি বলেন, জাতিসংঘ এটা করতে পারছে না। তারা কোনো ধরনের সহযোগিতাও করছে না।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন। ওই অধিবেশনে বিশ্বনেতারা অংশ নিয়েছেন। বক্তব্য দিতে গিয়ে ট্রাম্প দেখেন তাঁর টেলিপ্রম্পটার কাজ করছে না। এ নিয়ে হাস্যরস করে তিনি বলেন, তাহলে যা বলব, তা মন থেকেই বলব।
দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, যেসব দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে, ট্রাম্প তাদের কঠোর সমালোচনা করেন। ভারত, চীন ও কয়েকটি ন্যাটো দেশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অর্থায়ন করছে। তিনি বলেন, রাশিয়া যদি শেষ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর কঠোর শুল্ক আরোপ করবে।
শুরুতে তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ সংকট নিয়ে কথা বলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ বলে দাবি করেন। যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সীমান্ত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণযুগ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ প্রায় শূন্য। বক্তব্য একেবারে স্পষ্ট– অবৈধভাবে আমাদের দেশে এলে জেল অথবা যেখান থেকে এসেছ সেখানে যেতে হবে।’
অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে এখন সবাই বেশি সম্মান করে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তাঁর মধ্যপ্রাচ্য সফরের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উপসাগরীয় অঞ্চলে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত আমাদের বন্ধু দেশ। আমি মনে করি, আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভালো হয়েছে। তিনি যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেন।’
খুলনা গেজেট/এইচ